ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

শহরের রাস্তায় সকালেও শীতের পিঠা

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
শহরের রাস্তায় সকালেও শীতের পিঠা শহরের রাস্তায় সকালেও ভাপা পিঠা/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: নগরের পথে অফিস ফেরত লোকজন সন্ধ্যায় ধুলো মাখা ধোঁয়া ওড়া পিঠা ঠাণ্ডা করতে জোরে জোরে ফুঁ দেন, এটাইতো শহুরে শীতের চিত্র। তবে সকালে খুব বেশি এ ছবি চোখে পড়ে না। শীতের পিঠা যত গরমই হোক, তা কিন্তু ঠাণ্ডা হওয়ার আগেই আবার খেয়ে ফেলতে হয়।

গ্রামে শীতের পিঠার সময় সকালে আর শহরে সন্ধ্যায়। এটাইতো জানা।

তবে বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর হৃদরোগ হাসপাতালের সামনে চোখে পড়ে পিঠার এক উৎসব। অফিসগামীরাও যে চুলায় পিঠা দেখে থমকে যেতে পারেন, সেটা এখানেই দেখা যায়।  

সকালের অফিস মানেই তাড়া। ৯টা, সাড়ে ৯টা বা ১০টার আগেই অফিসে ঢুকতে হবে। এখানেই একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী রফিক আহমেদ পিঠা খাচ্ছিলেন। বলেন, আমার ব্রাঞ্চ একটু সামনেই। জ্যামের কারণে হেঁটেই অফিসে যাচ্ছিলাম। ভাপা পিঠা দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না। থেমে গেলাম।  

রোকেয়া আর সুফিয়ার এই পিঠার দোকানে বেশ ভীড়। গত তিন দিনের তুলনায় আজ শীত কিছুটা কম। গরম গরম পিঠা ধরলে হাতে আঁচ লাগে কিন্তু জ্বলে ওঠে না। খুব দ্রুত মুখে মিঠাই আর নারিকেল গুড় দেয়া ভাপা’র এক অংশে কামড় বসিয়ে দেয়া হয়।  

হেমন্তে ঘরে ওঠা আতপ চালের গুড়া থেকেই শীতের ভাপা পিঠা আর চিতই পিঠার কাঁচামাল। শহুরে জীবনে এই কাঁচামাল ঘরে নিয়ে পিঠা বানানো সহজ নয়। তাই পথেই পিঠা খাওয়া হয়, বললেন রফিক আহমেদ।  

গ্রামে পিঠা খাওয়া হয় সকালে। কারণ গ্রামের হাটে-বাজারে যাওয়া মানুষ বা ক্ষেতে কাজ করতে যাওয়া মানুষের মধ্যে শহরের অফিসগামী মানুষের পার্থক্য রয়েছে। তাই সন্ধ্যায় শহরে পিঠার দোকান বসে বেশি।  

তাহলে রোকেয়া আর সোফিয়া সকালে কেন পিঠা নিয়ে বসলেন? রোকেয়া বলেন, ভালো পিঠা হলে, অফিসের দেরিও বড় বিষয় না। দুই পাঁচ মিনিট দেরি হলেও মাইনষে ভাল পিঠা খেতে পথে দাঁড়ায়। আমি গুড় আর নারিকেল বেশি করে দেই।  

সাধারণত সন্ধ্যাতেই পিঠা নিয়ে হাসপাতালের সামনে বসেন তারা। রোকেয়া বলেন, তবে গত ৬ দিনের শীতে মানুষের পিঠা খাওয়ার চাহিদা বাড়ছে। গরম পিঠা পেট আর শরীর ‍দুইটাই গরম করে। গত ৬ দিন ধরেই পথে সকালেও পিঠা বিক্রি করছেন তারা। সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন।  

মাটির হাড়ির ওপর পানির পাতিল বসানো হয়েছে এখানে। এখন শহরের বেশিরভাগ স্থানেই স্টোবের চুলায় পিঠা তৈরি করা হয়। কিন্তু এখানে দেখা গেলো মাটির চুলায় লাকড়ি দিয়ে পানি গরম হচ্ছে। রোকেয়া বলেন, লাকড়ির চুলার তরকারির মতো পিঠার স্বাদও বেশি।  

এখানে শহরের অন্যান্য পিঠার দোকানের চেয়ে দেখা গেলো আকারটা একটু বড়। দাম ১০টাকা করে।  

দু’টি চুলায় দুটি পাতিল। সেখানে ছোট বাটিতে চালের গুড়া, ভেতরে গুড় আর নারিকেলের মিশ্রণ দেয়া হয়। একটি পাতলা কাপড় দিয়ে বাটির মুখ আটকে পাতিলের ওপর রাখা উল্টানো ঢাকনায় বসিয়ে দেন রোকেয়া।  

রোকেয়া বলেন, কাল সকালে ৪ থেকে ৫ কেজি আতপ চাল ভেজানো হইছিল। এরপর রাতে ভাঙ্গাইয়া আনি। অন্যদের জন্যে ভাঙ্গাইতে ২০ টাকা লাগলেও আমাগো কেজিতে লাগে ১৫ টাকা করে নেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৮
এমএন/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।