ঢাকা, রবিবার, ৪ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

রাজধানীতে প্রায় বিলুপ্ত 'জেব্রা ক্রসিং'!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২৯ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৮
রাজধানীতে প্রায় বিলুপ্ত 'জেব্রা ক্রসিং'! জেব্রা ক্রসিং।

ঢাকা: বছর দশেক আগেও রাজধানীতে ফুটওভার ব্রিজের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তখন ‘জেব্রা ক্রসিং’ দিয়ে পথচারীদের সড়ক পারাপারের নিয়ম ছিল। সেই নিয়ম এখনো আছে, তবে যেখানে ফুটওভারব্রিজ রয়েছে, সেখানে সুস্থ-সবল মানুষজনকে তা ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে। পাশাপাশি শারীরিক প্রতিবন্ধী ও রোগীরাও যাতে সড়ক পারাপার হতে পারে সেজন্য জেব্রা ক্রসিং রাখা হয়।    

সেই ‘জেব্রা ক্রসিং’ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও গুরুত্বরপূর্ণ মোড়ে এখন প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

পথচারী পারাপারের নিরাপদ এ মাধ্যম কয়েক বছর ধরে নগরীর সড়কে তেমন আর দেখা যাচ্ছে না।

যে কয়েকটা রয়েছে সেগুলোও অনেকটা উঠে যাওয়ার পথে। তবে রাজধানীজুড়ে ফুটোভার ব্রিজ বেড়েছে কয়েকগুণ।

শহরের রাস্তা থেকে পথচারীবান্ধব জেব্রা ক্রসিং হারিয়ে যাওয়াকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অধপতন বলে মানে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পথচারী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফুটওভার ব্রিজের তুলনায় রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে পথচারীদের বেশি পছন্দ জেব্রা ক্রসিং। বিশেষ করে শারীরিক ভাবে অসুস্থ পথচারীদের রাস্তা পারাপারে অন্যতম সহায়ক জেব্রা ক্রসিং। যানজট নিরসন ও ঝুঁকি এড়ানোর এজন্য নিরাপদ রাস্তা পারাপারের এ সভ্য মাধ্যমকে আবারও পুরোপুরি কার্যকরভাবে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান তারা।
সড়কে জেব্র ক্রসিং বিলীনের পথে।  ছবি: বাংলানিউজ
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হিসাব মতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) ৩১টি ও উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) ৫৬টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এছাড়া আন্ডারপাস রয়েছে তিনটি। তবে প্রায় সব ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পারপারে অনীহা দেখা যায় পথচারীদের। ব্রিজের নিচ দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয় তারা। জেব্রা ক্রসিং বিহীন রাস্তায় এভাবে পথচারী পারাপার- যা রীতিমত ভীতিজনক।

সরজিমন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, গুলশান, বনানীসহ কয়েকটি সড়কে জেব্রা ক্রসিং দেখা গেলও- তা হাতে গোনা। এর বেশির ভাগেরই সাদা চিহ্ন মুছে গেছে। নিয়ম অনুসারে, যে সড়ক বা মোড়ে ফুটওভার ব্রিজ থাকবে সেখানে জেব্রা ক্রসিং থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু শাহবাগ, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, নীলক্ষেত মোড়, টেকনিক্যাল মোড়, পল্টন মোড়সহ রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভার ব্রিজ কোনোটাই নেই। ফলে পথচারীরা ঝুঁকি নিয়েই গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
সড়কে জেব্র ক্রসিং বিলীনের পথে।  ছবি: বাংলানিউজ
একটা সময় ঢাকার রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং-এর উপর দিয়ে রাস্তা পারাপার হতো নগরবাসী। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে অসুস্থরা নির্ভয়ে রাস্তা পার হতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জেব্রা ক্রসিং যেমন উধাও হয়েছে, তেমনি সিগন্যাল বাতিও প্রায় অকেজো। জেব্রা ক্রসিং না থাকার কারণে ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়িগুলো থামার কোনো নিয়মনীতি মানে না। ট্রাফিক পুলিশ হাত উঠালেও গাড়ি টান দিয়ে চলে যায়, অনেক সময় মোড়ের মাঝখানেই গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ‘ট্রাফিক রুলস তোয়াক্কা করে’ মোড়েই দাঁড়িয়ে থাকে মোটরসাইকেল আরোহীরা।   

বাংলামোটরে দ‍ায়িত্বরত সার্জেন মোরশেদ বাংলানিউজকে বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। তবে ডিএমপি থেকে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অচিরেই আবার যেখানে ফুটওভার ব্রিজ নেই সেখানে জেব্রা ক্রসিং দেওয়া হবে, গাড়ির আলাদা লেন করা হবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হবে। মোড়ের মাঝখানে ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকবে। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সিগন্যাল বাতিতে সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।   

আশার কথা শোনালেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক-দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মফিজউদ্দিন আহমেদও।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্বের উন্নত প্রায় সব দেশেই রাস্তা পারাপারে পথচারীরা জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করেন। এতে দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও কম থাকে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জেব্রা ক্রসিং, গাড়ির জন্য সুনির্দিষ্ট লেন থাকাটা জরুরি। আমাদের এসবে ঘাটতি রয়েছে। সড়কে জেব্রা ক্রসিং উঠে গেছে,  গাড়ি লেন, পর্যাপ্ত ফুটওভার নেই। সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সুশৃঙ্খলা ফেরাতে সিটি করপোরেশন ও ডিএমপি এক যোগে কাজ করছে।   প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে আশা করি, দ্রুত সমস্যা সমাধান হবে।

নতুন করে 'জেব্রা ক্রসিং ও রোড মার্ক' এর কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে ডিএসসিসি’র প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে ফুটওভার ব্রিজের চেয়ে ‘জেব্রা ক্রসিং’ ব্যবহার করে পথচারী পারাপার হওয়া পছন্দ করি।   মধ্যখানে সড়কে জেব্রা ক্রসিংয়ের অবস্থা বেহাল ছিলো। নতুন প্রকল্প শুরু হয়েছে, দুই মাসের মধ্যে ডিএসসিসির সব সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও গাড়ির আলাদা লেন, পার্কিং জোন করা দেওয়া হবে। এসব ব্যবহারে সবাইকে মোটিভেশনও করা হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৮
এমসি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।