ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

দিনে ময়লার ভাগাড়, রাতে চলে রমরমা যৌন ব্যবসা

শরিফুল ইসলাম জুয়েল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০১৮
দিনে ময়লার ভাগাড়, রাতে চলে রমরমা যৌন ব্যবসা দিনে ময়লার ভাগার!

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় বিনোদনের জন্য রয়েছে অসংখ্য পার্ক, খেলার মাঠ ও বিনোদন কেন্দ্র। রাজধানীর দুর্বিষহ যানজট, আর দূষণের বাইরে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে মানুষ পার্কগুলোতে নির্মল-সবুজ পরিবেশ দেখতে চায়।

তবে বেশিরভাগ পার্ক আর বিনোদন কেন্দ্রের সবুজ পরিবেশ এখন শুধুই ইতিহাস। তেমনি একটি বিনোদন কেন্দ্র রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র ফার্মগেটের আনোয়ারা পার্ক।


 
পার্কটি দীর্ঘদিন পরিচর্যা না করায় পরিবেশ, সৌন্দর্য, নিরাপত্তা কোনো কিছুই ঠিক নেই এখন। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনভর এই পার্কে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলে, আর রাত হলে বসে মাদক আর অসামাজিক কাজের আড্ডা।
 
আল আমিন (১৯) নামের এক যুবক দিনের বেলা ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার এলাকায় ভাঙাড়ি টোকাই আর রাত হলে এসে এই পার্কে ঘুমায়।
 
আল আমিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, সারাদিন কষ্ট করে রাতে আসি ঘুমাতে, কিন্তু গাঁজাখোরদের জন্য ঘুমানো যায় না। সারারাত তারা উৎপাত করে। প্রতি রাতে কমপক্ষে দুই কেজি গাঁজা বিক্রি হয় এই পার্কে। আর কিছু নারী-পুরুষ তো এখানে যৌন ব্যবসা করে।
 
পার্কের বিভিন্ন জায়গায় শাড়ি টানিয়ে তারা রাতভর অসামাজিক কাজ করে বলে অভিযোগ করেন এই টোকাই।
 
শনিবার (৩ মার্চ) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আনোয়ারার নামে নামকরণ করা এই পার্কটি জুড়ে এখন বর্জ্য আর আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এছাড়া পার্কের সীমানা প্রাচীর আর লোহার গ্রিল ভাঙতে ভাঙতে এমন দশা যে এর নামফলকও খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কোথাও কোথাও বহুদিনের পুরনো গাছের গোড়ায় নিয়ে পোড়ানো হয়েছে ময়লা আবর্জনা। ফলে গাছের অনেকটা অংশ জুড়ে পুড়ে গেছে।
 
আবার অনেকেই এসে সংসার পেতেছেন এখানে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ এসে থাকেন এই পার্কে। এদের কেউ এসেছেন নদী ভাঙনে সব হারিয়ে কেউবা এসেছেন মামলায় সর্বশান্ত হয়ে।
 
তেমনি একজন মাহামুদা বেগম (৬৫)। তিনি নদী ভাঙনে সব হারিয়ে বিক্রমপুর থেকে এই পার্কে কত বছর আগে এসে বসতি গড়ছেন তা ঠিক করে বলতে পারেন না। তবে তার ১৭ বছরের ছেলে সাগরের জন্ম এখানে এসেই।
 
মাহামুদা বাংলানিউজকে বলেন, ‘কই যামু। ঘর ভাড়া নিতে অনেক ট্যাহা লাগে। পোলার জন্মের পর স্বামী আরেকটা বিয়া কইরা ভাগছে। ’
 
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশে মাঝে মাঝে খেদাইয়া দেয়। আবার আহি। যাওনের কোনো জায়গা নাই। ’
 
তবে গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টের কর্মচারী গিলবার গোমেজ মনে করেন কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণেই এমন পরিবেশ হয়েছে পার্কের।
 
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গুলশানের পার্কগুলোতে এমন হয় না। ঢাকার সব থেকে ব্যস্ত এলাকা ফার্মগেট। এই পার্কের পাশ দিয়ে প্রতিদিন মন্ত্রীরা যায়। তারা এগুলো দেখে না।  
 
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, পার্কটির সম্পূর্ণ অংশ এখন আর আমাদের কাছে নেই। এর কিছু অংশ পাবলিক ওয়েলফেয়ার ডিপার্টমেন্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর আমাদের মধ্যে যেটুকু আছে তার উন্নয়ন কাজ খুব দ্রুতই শুরু হবে। উন্নয়ন হলে এর চেহারা পাল্টে যাবে। তখন আর এ ধরনের কাজ হবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এসআইজে/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।