তাদের সঙ্গেই দাঁড়ানো ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন। যাদের পরিচয়ও শনাক্ত করতে চেষ্টা করেননি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা।
হামলার আগে হৃদয়, ইব্রাহিম এবং সুমন নামে তিন পুলিশ সদস্য মঞ্চেই অবস্থান করছিলেন। তাদের দু’জনের চোখ ছিল মোবাইলে। অন্যজন ছিলেন সামনের দিকে তাকিয়ে।
মঞ্চে পেছনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্র ও অপরিচিতদের ভিড়ে ড. ইকবালের ঠিক পিছনে দাঁড়িয়েছিলো হামলাকারী। বিষয়টি কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের নজরে ছিল না। তবুও হামলার বিষয়ে ব্যর্থতার দায় নিতে চাইছেন না পুলিশ কর্মকর্তারা। অনুষ্ঠানের শেষাংশে এসে হামলা চালাতে সক্ষম হয় হামলাকারী ফয়জুল।
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, অধ্যাপক জাফর ইকবালকে আগে থেকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। নিরাপত্তায় সশস্ত্র পুলিশ থাকার পরও হামলার ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ দায় এড়াতে পারে না।
রোববার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ তার কার্যালয়ে সার্বিক বিষয় নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে সাংবাদিকরা হামলার সময় পুলিশের দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
এসময় উপাচার্য জানান, হামলায় ইব্রাহিম এবং সুমন নামে পুলিশের দুই সদস্য আহত হন। এর মধ্যে হামলা ঠেকাতে গিয়ে ইব্রাহিমের হাতে মারাত্মক জখম হয়। অপর সদস্য সুমন হামলাকারী ফয়জুলকে তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীদের রোষানল থেকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত হন। যে কারণে পুলিশ সদস্যদের দ্বায়িত্ব পালনে গাফিলতি দেখছেন না তিনি। তবে হামলাকারীর পোশাক-আশাক দেখেই অনুমান করা যায়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নন।
বহিরাগত হয়েও দীর্ঘক্ষণ কীভাবে মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তা নিয়ে হামলার পর থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সাংবাদিকরা।
ঘটনার ২৬ ঘণ্টা পার হলেও এখনও দ্বায়িত্ব পালনরত সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ প্রশাসন। বরং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, হামলায় পুলিশ সদস্যরা আহত হয়েছেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বাংলানিউজকে বলেন, ড. জাফর ইকবালের উপর হামলা ঠেকাতে গিয়ে ইব্রাহিম ও সুমন নামে পুলিশের দুই কনস্টেবল আহত হয়েছেন। যে কারণে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন বা পুলিশের বিরুদ্ধে দ্বায়িত্ব অবহেলার কোনো অভিযোগ ওঠেনি।
কিন্তু ওইদিন কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের নাম জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি ।
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বাংলানিউজকে জানান, ড. জাফর ইকবালের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় ২৩ পুলিশ সদস্য মোতায়েন ছিলেন। ঘটনার পর কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য ও দেহরক্ষী স্যারকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি। কারণ পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তোলেননি।
এ ঘটনায় দফায় দফায় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শনিবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের উৎসব চলাকালে এ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বইমেলা প্রাঙ্গণে পুলিশের উপস্থিতিতে জঙ্গি হামলায় বিজ্ঞান লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় নিহত হন। সেখানেও পুলিশের দ্বায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। একইভাবে শনিবার ড. জাফর ইকবালের উপর পুলিশের উপস্থিতিতে হামলায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ গোটা দেশের সচেতন মানুষ।
হামলাকারী ফয়জুলের চলাফেরা ছিল রহস্যজনক
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৮
এএ