ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

‘মানুষের মূল্যায়নই যখন টাকায়, দুর্নীতি কেন নয়’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
‘মানুষের মূল্যায়নই যখন টাকায়, দুর্নীতি কেন নয়’ দুর্নীতি বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতা

ঢাকা: ‘দুর্নীতি খুবই আলোচিত একটা বিষয়। আলোচনার বিষয়। রাজনীতিবিদরা এটা নিয়ে কথা বলেন। টিআইবি রিপোর্ট দেয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতে দুর্নীতি দূরের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু দুর্নীতি তো থেমে নেই, বরং বেড়েছে, বাড়ছে।’ এমন মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান।

শনিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনে ‘ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’ আয়োজিত দুর্নীতি বিরোধী বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

গোলাম রহমান বলেন, দুর্নীতি নতুন কিছু নয়।

আড়াই হাজার বছর আগে চাণক্য তার অর্থশাস্ত্রে লিখেছেন কিভাবে রাজকর্মচারীরা দুর্নীতি করেন। এখন রজতন্ত্র নাই তবে আমলাতন্ত্র, রাজনীতি, সরকারি কর্মচারীরা আছেন। তারাই দুর্নীতি করছেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলে রাজনৈতিক দলগুলো যখন বিরোধী দলে থাকে তখন তারা দুর্নীতি বিরোধী কথা বলে। নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতেও দুর্নীতি বিরোধী কথা বলে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার পর আর কোন কথা মনে থাকে না।

দুদকের সাবেক এই চেয়ারম্যান আরো বলেন, এর কারণও স্পষ্ট। তারা যে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যায় সেই নির্বাচনের মধ্যেই ঘুন থাকে। ফলে দুর্নীতি বন্ধ হবে কী করে? নির্বাচন প্রক্রিয়াকেই যদি ত্রুটিমুক্ত না করা যায় তাহলে দুর্নীতিমুক্ত হবে না। কারণ, বেসরকারি হিসেবে একজন সংসদ সদস্যের নির্বাচিত হতে কয়েক কোটি টাকা লাগে। যদি অর্থশক্তি, পেশি শক্তি ও রাজনৈতিক শক্তি সংশোধন না হয় তবে দেশ দুর্নীতিমুক্ত হবে না।

তিনি বলেন, সমাজের দেড় শতাংশ মানুষ আছে যাদের কোনদিনই দুর্নীতি ও অন্যায়ের মধ্যে নেওয়া যায় না। আবার দেড় শতাংশ আছে যাদের কোনভাবেই দুর্নীতি থেকে দূরে রাখা যায় না। বাকিদের দুর্নীতিমুক্ত করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। দরকার বাল্যশিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি।

বর্তমানে ভোক্তা অধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, ১৯৮৯ সালে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে ন্যায়পাল নিয়োগের জন্য একটি আইন করা হয়েছিলো। দলগুলো নির্বাচনী ম্যানিফেস্টোতেও তা দেয় কিন্তু আজও তা হয়নি।

তিনি আরো জানান, কেবল শাস্তি দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। কারণ, সমাজ ব্যবস্থাই এমন যে মানুষের মূল্যায়নই হয় টাকায়। তাই পদ্ধতি ও চেতনার পরিবর্তন সবার আগে জরুরি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সম্পর্কিত একজন উপদেষ্টা নিয়োগের পরামর্শ দিয়ে গোলাম রহমান বলেন, এই উপদেষ্টা দুর্নীতি বন্ধ নয়, কমিয়ে আনতে কাজ করবেন। কারণ, দুর্নীতি একবারে বন্ধ হয় না। দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি কমে আসবে। বর্তমানে এ কারণে দেশ দেড় শতাংশ জিডিপি হারাচ্ছে। দেশকে উন্নত করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। বিতর্কে অংশ নেন ইস্ট ওয়েষ্ট ইউনিভার্সিটি ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। বিতর্কের বিষয় ছিলো ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছাই পারে দুর্নীতি দূর করতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৮
আরএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।