ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

নিরাপদ আশ্রয়ই কাল হলো তাদের

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
নিরাপদ আশ্রয়ই কাল হলো তাদের নিচের এসব দোকানে ঢুকে বের হতে পারেননি অধিকাংশ মানুষ/ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: আগুন লাগার পর নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অনেকেই পাশের ওয়াহিদ ভবনের দোকানে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু সেই নিরাপদ আশ্রয়ই কাল হলো তাদের। চকবাজারের এই ভবনটিতে আগুনে পুড়ে যত মানুষ মারা গেছেন, তার ৮০ শতাংশই নিচের কয়েকটি ফ্লোরের ব্যবসায়ী। 

স্থানীয়রা বলছেন, উপরের ফ্লোরের বাসিন্দারা দ্রুত ভবন থেকে বের হতে পারলেও নিচের ফ্লোরগুলোর লোকজন বের হতে পারেননি। কারণ যখন সড়কে আগুন লাগে, তখন আগুন থেকে বাঁচতেই ব্যবসায়ীরা দোকানের শাটার বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান নেন।

পথচারীরাও অনেকে দৌড়ে নিচের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভিতরে ঢোকেন। কিন্তু সেখান থেকে বেঁচে ফিরতে পারেননি অধিকাংশই।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের অদূরে চকবাজারের ওয়াহিদ ম্যানসন। পুরান ঢাকার ব্যস্ত এই এলাকায় বুধবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টায়ও ব্যস্ত মানুষের আনাগোনা ছিল। ছিল সরু এই সড়কে যানজটও। কিন্তু হঠাৎ করেই রাত পৌনে ১১টায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কি ঘটেছিল সেখানে? কীভাবে লেগেছিল আগুন?

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে হঠাৎ সড়কে রাখা একটি কার অথবা পিকআপের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পাশের ওয়াহিদ ভবনে।  

ওয়াহিদ ম্যানসনস্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, ওই ভবনটির পুরোটাই ছিল কেমিক্যাল গোডাউন। বডি স্প্রেসহ নানা রাসায়নিক দ্রব্য তৈরির কারখানা ছিল। ফলে মুহূর্তের মধ্যেই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভবনে আগুন লাগার পর পাশের কয়েকটি ভবনেও ছড়িয়ে পড়ে।  

পুরান ঢাকার চকবাজারের ওয়াহিদ ভবনে ব্যবসা করতেন নোয়াখালীর হেলাল উদ্দিন। গত রাতের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে হেলাল চলে গেছেন পরপারে।  

শাটার টানা একটি দোকানহেলালের পুরো পরিচয় পাওয়া না গেলেও তার পরিচিত আসাদ জানান, তারা একসঙ্গে মাঝে মধ্যে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। তিনি হেলালের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, আমি শুধু জানি ওনার বাড়ি নোয়াখালীতে। এছাড়া আর কোনো কিছু জানা নেই।  

শুধু হেলালই নন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে এখন পর্যন্ত ৭০ জন মারা গেছেন। তবে এ সংখ্যা গিয়ে কততে দাঁড়াবে, সেটা জানতে আরো অপেক্ষা করতে হবে। সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের বিরামহীন উদ্ধার অভিযান চলছিল। আগুনের তীব্রতা কমাতে হেলিকপ্টার থেকেও পানি ছিঁটানো হয়।  

চকবাজারের একটি দোকানে কাজ করেন আজাদ মিয়া। তিনি জানান, তার পরিচিত একজন মুফতি ওই ভবনেই থাকতেন। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার দোকানের প্রচুর ধর্মীয় কিতাব পুড়ে ছাই হয়েছে।  

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জব্বার বলেন, আমরা সবাইকে নিয়ে বসবো। সরকারকে বলবো, শুধু এলাকাবাসী কেমিক্যাল গোডাউন মুক্ত করতে পারবে না। এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। বড় দুর্যোগ থেকে বাঁচতে এখনই উদ্যোগ প্রয়োজন। না হলে কঠিন দুর্যোগ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।  

***চকবাজারের রোগী ভর্তি নিতে সব হাসপাতালকে নির্দেশ
***চকবাজারে আগুন: বেড়েই চলেছে লাশের সারি
***
যেন কোনো মৃত্যুপুরীতে কঙ্কাল আর কঙ্কাল
***বার্ন ইউনিটের ৯ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক
***আরও সতর্ক-মনযোগী হবো: ওবায়দুল কাদের
***চকবাজারের আগুন ‘ওয়েক আপ কল’
***নিরাপদ আশ্রয়ই কাল হলো তাদের
***ঢামেকে মরদেহ রাখার অধিকাংশ ফ্রিজ নষ্ট, সংরক্ষণে সমস্যা
***চকবাজারে নিহত শ্রমিকদের পরিবার পাবে ১ লাখ টাকা
**‘কেমিক্যাল কারখানা সরাতে সহযোগিতা করা হবে’
***আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় চকবাজারের ভয়াবহ আগুন
***সরকারের দায়িত্বহীনতায় চকবাজারে অগ্নিকাণ্ড: ফখরুল
***অগ্নিকাণ্ডে হতাহত: রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
***৭০ জনের মরদেহ উদ্ধার, আরও থাকতে পারে: আইজিপি

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
টিএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।