এখনও পর্যন্ত নাবিলার পরিবার সঠিক কাগজপত্র জমা দেয়নি। একই সঙ্গে ‘সঠিক’ উত্তরাধিকারী না পাওয়ায় দুর্ঘটনার একবছর পেরিয়ে গেলেও নিহত ২৭ জনের মধ্যে ৮ জনের ক্ষতিপূরণ দিতে পারেনি সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
প্রসঙ্গত, সেনা কল্যাণ সংস্থার অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড’ বিগত তিন বছর ধরে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বীমাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে।
সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সফিক শামীম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের একবছরের মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা দিতে পারিনি। যেমন ক্ষতিপূরণের জন্য জমা দেয়া কাগজের সঙ্গে নামের অমিল, উত্তরাধিকারীর নাম ঠিকানায় ভুল ও একাধিক উত্তরাধিকারী থাকা ইত্যাদি কারণে। আমরা আইনগতভাবে সব আবেদনকারীকে সব ধরনের সহায়তা করে যাচ্ছি। যাতে তারা দ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থ পেতে পারেন। ’
তিনি বলেন, নেপালে ইউএস-বাংলার প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত নাবিলার মা আমাদের কাছে যে কাগজ জমা দিয়েছেন তাতে নাবিলার সার্টিফিকেটের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম, ঠিকানা ও তার মায়ের নামের মিল নেই। নামের মিল না থাকা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আদালত তার ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড় করেননি। কারণ আদালত বা আমরা মিথ্যা কাগজপত্র গ্রহণ করি না। এজন্য তার মাকে ডেকে এনে সঠিক কাগজ দেয়ার অনুরোধসহ তাকে সব ধরনের সহায়তার কথা বলা হয়েছে।
বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সফিক শামীম বলেন, নাবিলা ছাড়াও নানা জটিলতায় নিহত আরো ৭ জনের ক্ষতিপূরণের অর্থ এখনও দিতে পারিনি। এরমধ্যে নিহত এক পরিবারের তিনজনের কাগজপত্র জমা দিতে দেরি করেছে। বাবার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির একাধিক দাবিদার থাকায়-এই তিনজনের আরো একটি সমস্যা দেখা দিয়েছে কোর্ট তাদের সঠিক উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করতে পারেননি। এজন্য তাদেরটা দিতেও দেরি হচ্ছে। তবে ভরসা করা যায় এমন একজন উত্তরাধিকারী পাওয়া গেছে। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা যাবে।
‘এছাড়া আরও চারজনের কেস কোর্টে রয়েছে। তাদেরও খুব দ্রুত দেয়া হয়ে যাবে। টাকা রেডি আছে, কোর্ট রায় দিলে আমরা তাদের পরিবারকে ডেকে দিয়ে দিবো। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের মোট ৩৬ জন যাত্রী ও পাইলট-ক্রু হতাহত হন। এর মধ্যে ২৫ জনকে ১৫ কোটি টাকার বীমা দাবির চেক হস্তান্তর করেছে সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এর মধ্যে নিহত ১৯ জন এবং ছয়জন আহত।
নিহত ১৯ জনের মধ্যে দুইজন ক্রু, একজন কো-পাইলট ও একজন পাইলট রয়েছেন। বাকি ১১টি পরিবারের মাঝে আদালতের নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই ক্ষতিপূরণের অর্থ হস্তান্তর করা হবে।
সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনায় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের প্লেনটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। সার্ভেয়ার কোম্পানির রিপোর্ট অনুযায়ী, প্লেনটির মোট ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ মিলিয়ন ডলার; যা ইতোমধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে যাত্রী হিসেবে ৫১ হাজার ১২০ মার্কিন ডলার।
আর যারা প্লেনের ক্রু, কো-পাইলট ও পাইলট ছিল তারা আরও ৫০ হাজার মার্কিন ডলার করে পেয়েছে। আর আহত প্রতিজন চিকিৎসা খরচ বাদে ন্যূনতম ১৮ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৪ কোটি টাকা পেয়েছেন। সংশ্লিষ্ট যাত্রীর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির ভিত্তিতে আহত যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ নিরূপিত হয়।
গতবছরের ১২ মার্চ নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনায় পড়ে ইউএস-বাংলার বিএস-২১১ ফ্লাইটটি।
ঢাকা থেকে কাঠমান্ডুগামী ফ্লাইটটিতে বাংলাদেশ ছাড়াও নেপাল, চীন ও মালদ্বীপের যাত্রী ছিলেন। চার ক্রু-পাইলটসহ প্লেনটিতে আরোহী ছিলেন মোট ৭১ জন।
নিহতের মধ্যে ২৭ জন বাংলাদেশি, ২৩ জন নেপালি এবং একজন চীনা যাত্রী নাগরিক। আর আহতদের মধ্যে ৯ জন বাংলাদেশি, ১০ জন নেপালি ও একজন মালদ্বীপের নাগরিক ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৯
জিসিজি/এমএ