ঢাকা, রবিবার, ১২ মাঘ ১৪৩১, ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৫ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

কিশোরী চক্র ফাঁদে ফেলে পুলিশ মামুনকে হত্যা করে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৯
কিশোরী চক্র ফাঁদে ফেলে পুলিশ মামুনকে হত্যা করে মামুন ইমরান খান

ঢাকা: কিশোরী চক্র ফাদে ফেলে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে হত্যা করেছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে ডিবি পুলিশ।

সোমবার(৮ এপ্রিল)মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান সিএমএম আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করলেও বৃহস্পতিবার(১১ এপ্রিল) বনানী থানা রেকর্ডি অফিসার রকিবুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান।

চার্জশিটের আসামিরা হলেন, রবিউল ইসলাম (৩০), রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), ইমরানের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) এবং দুই কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণ ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফী (১৬) ও ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা (১৬)।

অভিযোগ পত্রে বলা হয়, টেলিভিশনে ক্রাইম ফিকশন অনুষ্ঠানে আসামী রহমত উল্লাহর সঙ্গে অভিনয়ের সূত্র ধরেই মামুন ইমরান খানের পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। ওই দুজনের সঙ্গে অভিনয় করত কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণা। ওই চক্রের প্রধান কেয়া।

রহমত উল্লাহর অনেক টাকা আছে, তাকে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করা সম্ভব বলে জানায় রবিউলের স্ত্রী কেয়া । ওই কিশোরী পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রহমত উল্লাহকে ট্র্যাপে ফেলে টাকা আদায়ের চিন্তা করে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই  ভুয়া জন্মদিনের কথা বলে কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণা বাসায় ডাকে।

ফোন পেয়ে রহমতউল্লাহ ইমরানকে সঙ্গে নিয়ে মেহেরুন নেছা স্বর্ণা বাসায় যান।

স্বর্ণা বাসার নীচ থেকে দুইজন মহিলাসহ এগিয়ে নিয়ে যায় এবং দুইজন মহিলাকে  একজন ভাবী অপর জনকে বোন বলে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর তাদের বাসার ভেতরে নিয়ে যায়। বাসায় গিয়ে তারা দেখেন, জন্মদিনের কোনো আয়োজনই নেই। তখন রহমত উল্লাহ ওই কিশোরীকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের নাকি বার্থডে পার্টি, কিন্তু তার তো কিছু দেখছিনা  তখন চক্রের প্রধান কেয়া বলেন, তাদের বার্থডে পার্টি এ রকমই হয়, একটু পরই বার্থডে পার্টির আয়োজন দেখতে পাবেন বলে  আসামী কেয়া কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়, যাওয়ার পর আসামী স্বপন, দিদার, আতিক ও মিজান রুমে ঢুকে  মামুন ও রহমতের উদ্দেশে বলেন বাজে উদ্দেশ্য নিয়ে তোরা এখানে এসেছিস। তখন মামুন ওই কথার প্রতিবাদ করলে সঙ্গে সঙ্গে ওই চারজন মামুনকে মারতে শুরু করেন। মেয়েদের সঙ্গে ছবি তুলে টাকা আদায় করা হবে বলে জানায়। তখন ইমরানকে চেপে ধরে স্বপন, আতিক ও দিদার। স্কচটেপ দিয়ে হাত-পা বাঁধেন দিদার ও স্বপন। আসামী মিজান মুখ চেপে ধরলে ইমরান তার হাতে কামড় দেন। তখন মিজান ও দিদার পেছন থেকে ইমরানের ঘাড়ে আঘাত করেন এবং আতিক সজোরে লাথি মারলে ইমরান অজ্ঞান হয়ে পড়েন। তখন রহমত উল্লাহকেও হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়।

চার্জশিটে  আরো বলা হয়, রাত ১২টার দিকে ইমরানের হাত-পা কেমন শক্ত মনে হয়, এরপর রবিউলের পরামর্শে আসামী স্বপন, আতিক ও দিদার ধারালো অস্ত্র দিয়ে মামুনের পায়ের আঙুল কেটে রক্ত বের না হওয়ায় তারা নিশ্চিত হন পুলিশ কর্মকর্তা ইমরান মারা গেছেন। বড় একটা বস্তা ভরে সকাল সাতটায় আসামী স্বপন, দিদার ও আতিক লিফটে করে মামুনের লাশ নিচে নিয়ে এসে রহমত উল্লাহর প্রাইভেট কারের পেছনে রাখে। রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে দিদার, আতিক, স্বপন ও মিজান ছিল। প্রধান আসামী রবিউল সামনে মটরসাইকেলে ছিল। গাড়িটি বনানী থেকে আবদুল্লাহপুর যাওয়ার পথে বাঁশঝাড় দেখে আসামী স্বপন রহমত উল্লাহকে গাড়ি থামাতে বলেন। তখন গাড়ি থেকে লাশ বাঁশঝাড়ের মধ্যে নিয়ে আতিক লাশের গায়ে পেট্রল ঢালে এবং স্বপন আগুন দেয়। এরপর রহমত উল্লাহ গাড়ি চালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন।

চার্জশিটে আরও বলা হয়, বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায় করাই ছিল ওই চক্রের কাজ। যার প্রধান রবিউল ইসলাম।

২০১৮ সালের ৯ জুলাই গাজীপুরের জঙ্গল থেকে মামুন ইমরান খানের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় মামুনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে বনানী থানায় এ মামলা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১২ ঘন্টা, এপ্রিল১১, ২০১৯
এমএআর/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।