তখনো ফোটেনি আলো। তার আগেই ঐহিত্যবাহী পোশাকে সেজে নদীর পাড়ে আসতে শুরু করে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীরা।
বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) গভীর রাত থেকে নাচে-গানে শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় উৎসবের আবহ ছড়িয়ে দেয় তরুণ-তরুণীরা। শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ির খবং পড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর পাড়ে নদীতে ফুল ভাসানো উপলক্ষে বসে মিলনমেলা। নানান বয়সের মানুষ বন-জঙ্গল থেকে সংগৃহীত ফুল নিয়ে হাজির হয় নদীর পাড়ে। কলাপাতায় করে ভক্তি-শ্রদ্ধাভরে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে পুরনো বছরের গ্লানি ভুলে নতুন বছরের শুভ কামনা করে তারা। অনেকে জ্বালায় মোমবাতি।
এই তরুণীদের মধ্যে দু’জন তেজশ্রি চাকমা ও নেকি চাকমা। তারা বাংলানিউজকে বলেন, নদীতে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনা করেছি, যেন আমরা সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারি, সব দুঃখ-কষ্ট থেকে যেন মুক্তি পাই। দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করেছি।
উর্বশি চাকমা ও ক্রান্তিকা চাকমা বলেন, প্রতিবছর এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি। আজ থেকে আমাদের বৈসাবি উৎসব শুরু হলো। আমরা পুরনো দিনের গ্লানি ভুলে নতুন বছরে ভালো কিছু প্রত্যাশায় এবং সবার মঙ্গলকামনায় নদীতে ফুল ভাসিয়ে দিয়েছি।
হৈমন্তি চাকমা ও পলাশ চাকমা বলেন, আমরা চাই পাহাড়ে শান্তি আসুক। সব জাতিগোষ্ঠী যেন হানাহানি ভুলে মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, আজকের দিনে সেই প্রার্থনা করি।
তিন সম্প্রদায়ের বাৎসরিক প্রধান উৎসবের নামের প্রথম অক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’ শব্দের সৃষ্টি। বৈ-তে ত্রিপুরাদের বৈসু, সা-তে মারমাদের সাংগ্রাই আর বি-তে চাকমা সম্প্রদায়ের বিজুকে বোঝানো হয়েছে।
চাকমারা শুক্রবার ফুল বিজু, রোববার মূল বিজু এবং সোমবার গজ্জাপয্যা পালন করবে। ওইদিন ঘরে ঘরে চলবে অতিথি আপ্যায়ন। সেইসঙ্গে সব বয়সী মানুষ নদী, খাল কিংবা ঝরনায় পূজা দেবে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশ্যে।
ত্রিপুরা সম্প্রদায় হারিবৈসু, বিযুমা, বিচিকাতাল এবং মারমা সম্প্রদায় পেইংচোয়ে, আক্যে ও অতাদা নামে আলাদা আলাদা নামে উৎসব পালন করে থাকে।
এদিকে বৈসাবী উৎসবকে ঘিরে শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা চলছে পাড়া-মহল্লায়। যেন উৎসবে বর্ণিল হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৯
এডি/এইচএ/