মঙ্গলবার (০২ জুলাই) ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নয়ন বন্ড নিহত হয়েছেন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পরে সকাল পৌনে ১০টার দিকে বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এ সময় নয়নের বিরুদ্ধে থাকা আটটি মামলার কথাও বলা হয়।
এসপি মারুফ হোসেন বলেন, গত ২৬ জুন সংঘটিত চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলার পলাতক আসামিরা বরগুনা সদর থানার পুরকাটা ফেরিঘাট এলাকায় আত্মগোপন করে আছে-এমন খবর পেয়ে আমরা সেখানে অভিযান চালাই।
অভিযানের নেতৃত্ব দেন পাথরঘাটা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিএম আশ্রাফ উল্যাহ তাহের। ভোর সোয়া ৪টার দিকে ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নের পূর্ব বুড়িরচর গ্রামের পুরাকাটা ফেরিঘাট থেকে আধা কিলোমিটার দক্ষিণে চায়না প্রজেক্টের রাস্তা সংলগ্ন মজিদ মিলিটারির বাড়ির পূর্বপাশে অভিযান চালানো হয়।
তিনি বলেন, এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামিরা পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছোড়ে। অভিযান পরিচালনাকারী পুলিশ সদস্যরা জান ও সরকারি মালামাল রক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়েন। উভয়পক্ষের গুলিতে আসামিদের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে। আর সহযোগীরা পালিয়ে যায়।
‘গুলির শব্দে এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন স্থানীয় লোকজন। তারাই গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ব্যক্তিকে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড হিসেবে শনাক্ত করেন। ’
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অভিযানে বরগুনা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেন, বরগুনা সদর থানার এসআই (নিরস্ত্র) মো. হাবিবুর রহমান, জেলা ডিবির এসআই (নিরস্ত্র) মো. মনিরুজ্জামান, কনস্টেবল মো. হাবিবুর রহমান আহত হয়েছেন।
আহত পুলিশ সদস্য সদস্যদের বরগুনা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরমধ্যে গুরুতর আহত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান হোসেনকে বরিশাল বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তিনি জানান, বন্দুকযুদ্ধ শেষে ঘটনাস্থল থেকে তিনটি দেশীয় তৈরি ধারালো অস্ত্র, একটি বিদেশি পিস্তল ও একরাউন্ড পিস্তলের গুলি ও দুই রাউন্ড শটগানের কার্তুজের খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে নিহত নয়নের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা সদর হাসাপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
গত ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফ (২২) নামে এক যুবককে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা। নয়ন নিজেকে রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীকা মিন্নির সাবেক স্বামী হিসেবে দাবি করেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, নয়ন বন্ড অপরাধ জগতে পা দেওয়ার পর ২০১৫ সালে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিতে আসেন। তার বিরুদ্ধে থাকা ৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি, হত্যা ও মাদক মামলা রয়েছে। নয়ন বন্ড একটি বাহিনী গড়ে তুলেছিল। যার নাম ‘০০৭’। সন্ত্রাস, মাদক চোরাকারবার, ছিনতাই, হত্যা, কুপিয়ে আহত করার মতো বহু ঘটনা ঘটিয়েছে এই বাহিনী। বরগুনা শহরে সে এক ভীতির রাজত্ব কায়েম করেছিলো।
পড়ুন>>
** রিফাত হত্যায় প্রশাসনের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়
** রিফাত হত্যার ঘটনায় আতঙ্কে নতুন শিক্ষার্থীরা
** ‘রনির মতো ৫ জন এগিয়ে এলে রিফাত বাঁচতো’
নয়ন বন্ড ২০১৫-১৬ সাল পর্যন্ত চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারী হিসেবে অভিযুক্ত থাকলেও ২০১৭ সালে আবির্ভূত হন মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে ৪৫০ পিস ইয়াবা ১ শত গ্রাম হেরোইন ও ১২ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করে পুলিশ। যার মূল্য তৎকালীন সময়ে ধরা হয় প্রায় ১২ লাখ টাকা।
আরো পড়ুন>>
** রিফাত হত্যা: দুই জনের স্বীকারোক্তি, ৩ জন রিমান্ডে
** রিফাত হত্যা: ১১ ও ১২ নম্বর আসামি গ্রেফতার
** রিফাত হত্যা: সাগর গ্রেফতার, কনস্টেবল পদে চাকরি হচ্ছে না
** ‘প্রধান আসামিদের গ্রেফতারে গাফিলতি দেখলেই ব্যবস্থা’
** রিফাত হত্যা মামলায় তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর
** ‘হুমকি দিয়ে নয়ন আমার থেকে সই নিয়েছিলো’
** রিফাত হত্যা মামলা: আসামিদের ধরতে জেলাজুড়ে চেকপোস্ট
** স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ১
** সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়েও স্বামীকে বাঁচাতে পারলেন না
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, নয়ন এসব মামলায় জামিনে ছিলেন। তবে জামিনে বের হয়ে আসার পর তার আগ্রাসন আরো বেড়ে যায়। স্থানীয়রাও তার আচার-আচরণে অতিষ্ঠ।
আইনজীবীরা বলেছেন, পুলিশের দায়ের করা অভিযোগ (এফআইআর) বা চার্জশিটের ত্রুটির কারণেই নয়ন বন্ড ও তার সহযোগীরা নানা অপকর্মের পরও দ্রুত জামিনে বের হয়ে যেতো।
যদিও পুলিশের দাবি, প্রতিটি মামলাতেই নয়ন বন্ডকে অভিযুক্ত করেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
পড়ুন>>
** রিফাতের দাফন সম্পন্ন
** বরগুনার বাড়িতে রিফাতের মরদেহ
** ‘হামলার সময় কোনো লোক এগিয়ে আসেনি’
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৯
এমএস/এমএ