তবে সবচেয়ে কৌতূহল বিষয় হলো শাকিল সব সময় ‘হেলমেট’ পরে রিকশা চালান। শুধু ঝড়, বৃষ্টি-রোদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে তিনি ‘হেলমেট’ পরেন না।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় দেখা হয় রিকশাচালক শাকিলের সঙ্গে। নিজ গন্তব্যের কথা বলে তার রিকশা নিলেও ভাড়া চাইলেন না তিনি। শুধু বললেন, অন্য রিকশাচালককে যা দেন আমাকেও তাই দিয়েন। চলতে চলতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হলো তার সঙ্গে। শাকিল জানালেন, ১০ বছর আগে অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। শুরুতে ফেরি করে পান-সিগারেট বিক্রি করেছেন, কখনও আবার চা বানিয়েও বিক্রি করেছেন। যে কাজই করেন তার অবসরে তিনি রিকশাও চালাতেন। পাঁচ বছর আগে তার একমাত্র বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। বাড়িতে গরু-ছাগল কিনেছেন, এখন আর অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় না তার বৃদ্ধ বাবার। ১৫ দিন পর পর তিনি বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠান। সে টাকা তারা বুঝেশুনে খরচ করেন।
তিনি আরও জানালেন, গত তিন বছর ধরে সব কাজ ছেড়ে টানা রিকশা চালাচ্ছেন, ভালোই আয় হয় তার। ৩শ টাকা গ্যারেজে জমা দিয়েও প্রায় ৭ থেকে ৮শ টাকা জমা থাকে তার। নিজের চলার জন্য কিছু টাকা রেখে বাকি টাকা পাঠিয়ে দেন গ্রামের বাড়িতে।
আর মাত্র ৫০ হাজার টাকা জমানো হলে বিয়ে করবেন বলে যোগ করেন রিকশাচালক শাকিল।
তবে দিনের বেলায় রোদ-বৃষ্টি নেই এমন সময় কেন মাথায় হেলমেট? তাও আবার রিকশা চালাতে, এমন প্রশ্ন শুনে হেসে উত্তর দিলেন শাকিল।
তিনি বলেন, আমি সবসময় হেলমেট পরে রিকশা চালাই। অনেকেই এনিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ও হাসাহাসি করে। আমি এসবে কিছু মনে করি না। আমি আমার মতোই চলি, আমার ‘হেলমেট’ পরার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানাই সড়ক দুর্ঘটনার।
তিনি আরও বলেন, এখন প্রতিনিয়তই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাজধানীতে মোটরসাইকেল বেড়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনাও বেড়েছে অনেক। আমি নিজেও একদিন সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলাম। এতে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এ শহর আমার, এখানে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমি চাই দুর্ঘটনা মুক্ত শহর হোক ‘ঢাকা’, ফিরে আসুক সব যানবাহনে শৃঙ্খলা। আমরা সবাই নিরাপদে চলাফেরা করতে চাই। ‘হেলমেট’ পরে আমি যেমন নিজেকে বাঁচাতে চাইছি, তেমনি এর মাধ্যমে সব দুর্ঘটনার প্রতিবাদও জানাই। ‘হেলমেট’ পরা আমার একটি প্রতিবাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
ইএআর/এএটি