এছাড়াও জেলা প্রশাসনের নৌকা তৈরির অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধি করে তিন লাখ টাকার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে সরকার।
জেলা প্রশাসক সম্মেলনের তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সচিবালয়ে তৃতীয় কার্যঅধিবেশন শেষে একথা জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বন্যার সময় বন্যাকবলিত জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর জন্য ডিসিরা নৌকার প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা নৌকার জন্য আগে এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম। ওনারা তিন লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। আমরা সেই প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছি।
‘এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য কন্যা সায়মা হোসেন আমাদের একটি প্রস্তাব দিয়েছেন, একটি ডিজাইন দিয়েছেন, স্টেটিমেট দিয়েছেন ১০ লাখ টাকার একটি নৌকা। যে নৌকায় বন্যাকবলিত জনগণ তাদের মালামাল এমনকি ঘর পর্যন্ত অন্য জায়গায় সরিয়ে নিতে পারবেন, সেটাও আমরা প্রকল্প গ্রহণ করছি। ’
পরে শাহ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, বন্যা আক্রান্ত হয় এমন ৩৫টি জেলায় সায়মা ওয়াজেদের প্রস্তাবিত ওই নৌকার একটি করে দেওয়া হবে। যে নৌকার আকৃতি বেশ বড় এবং এতে ঘরসহ মানুষ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ওঠানো যাবে।
বন্যার পরিস্থিতি নিয়ে দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রথমে ১০টি জেলা আক্রান্ত ছিল, তার দু’দিন পরে ১৫টি এবং গতকাল পর্যন্ত ২০টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যাকবলিত প্রত্যেক জেলায় এ পর্যন্ত ৭০০ মেট্রিকটন চাল, ১১ ধরনের চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। প্রথমে দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিলাম, সোমবার (১৫ জুলাই) আরো ৩৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি।
গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য সোমবার প্রত্যেক জেলায় এক লাখ করে টাকা এবং শিশুদের খাদ্যের জন্যও এক লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু পাঠিয়েছি, প্রত্যেক তাঁবুতে ২০ জন করে মানুষ আরামের সঙ্গে থাকতে পারবেন।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ২৩টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নসহ সঠিকভাবে ত্রাণ সরবরাহ ও কোনোরকম যেন দুর্নীতি না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসকদের তদারকি করতে বলা হয়েছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী।
বন্যার আরো অবনতি হতে পারে কিনা- প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত এতোটা আশঙ্কাজনক অবস্থা নেই। আবহাওয়াবিদদের মতে বৃষ্টিপাত আরো হতে পারে। চীন, নেপাল ও ভারতে বৃষ্টিপাত হয় এবং ব্রক্ষ্মপুত্র ও যমুনার পানি বৃদ্ধি পেলে আমাদের আরেকটু অবনতি হতে পারে। আমরা আগাম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সামর্থ্য আছে।
বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার
বজ্রপাতে প্রতিদিনই মানুষ প্রাণ হারায় জানিয়ে এনামুর রহমান বলেন, মৃত্যু নিরোধে বজ্রপাত নিরোধক টাওয়ার বসানোর জন্য ডিসিরা প্রস্তাব দিয়েছেন। তাদের প্রস্তাবের আগেই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং কর্মশালাও করেছি। এখন পর্যন্ত প্রতি বজ্রনিরোধকের মূল্য পেয়েছি সর্বনিম্ন প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা। সেটা অনেক বড় বাজেটের ব্যাপার। আমরা চেষ্টা করছি আরো কম মূল্যে পাওয়ার। পাওয়া গেলে যেখানে বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি সেখানে টাওয়ার বসাবো।
ডিসিরা বন্যা-সাইক্লোনসহ দুর্যোগে কাজ করতে স্পিড বোটের সংখ্যা বাড়ানো ও সারা বছর জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রস্তাব করেছেন।
এছাড়া ডিসিরা জেলা-উপজেলা থেকে ত্রাণ সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা এরইমধ্যে ৬৪ জেলায় ৬৬টি ত্রাণ গুদাম নির্মাণের কাজ শুরু করেছি, এগুলোর কাজ শেষ হলে আমরা জেলা প্রশাসকের অধীনে ত্রাণ সামগ্রী জেলা পর্যায়ে রাখতে পারবো।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, গৃহহীনদের জন্য প্রথম ধাপে ১১ হাজার ৬০৪টি ঘর নির্মাণ শুরু করেছি। ডিসিদের প্রস্তাবনা ছিল ঘরের মান আরেকটু উন্নত করা এবং বাজেট বাড়ানো। আমরা গত অর্থবছরে বাজেট দিয়েছিলাম দুই লাখ ৫৮ হাজার টাকা। এবার বাজেট দিয়েছি তিন লাখ টাকা। এই অর্থবছরে ২৩ হাজার ঘর করার জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমআইএইচ/জেডএস