বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা কারাগারের জেল সুপার মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, সমস্ত কাগজপত্র যাচাই করে তাকে (আজমত আলী) মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
পড়ুন>>রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রাপ্ত আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ
আজমত আলী জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দি এলাকার পাখিমারা গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম ইজ্জত উল্ল্যা সর্দার। তিনি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার ঘোড়ামারা এলাকার ভেঙ্গুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার রায় ভোগ করছিলেন আজমত আলী। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে ২৭ জুন আপিল বিভাগ রায় দেন।
ওই আদেশের ভিত্তিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতে সোমবার (১৫ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু তাহের নির্দেশনা পাঠান।
বিশেষ ডাকযোগে নির্দেশনাটি জামালপুরের দায়রা জজ আদালত ও জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হলে যাচাই বাছাই শেষে মঙ্গলবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ফিরে দেখা:
১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষে এলাকার কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। এ ঘটনায় আজমত আলীকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করা হয়।
এ মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আজমত আলী।
একই সময় তিনি রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার জন্যও আবেদন করেন। আপিল বহাল থাকার সময় রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
পরে ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্টের রায়েও তিনি খালাস পান। এভাবে ১৩ বছর কেটে যায়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ; যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিকে (আজমত আলী) নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
হাজিরা দিতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানি জারি হয়। এরপর ২০০৯ সালের ১৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমতকে গ্রেফতার করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সে সময় থেকে কারাগারে রয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে ২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে আসা রায়ে হাইকোর্টের রায় (খালাস) ও আদেশ রদ করে নিম্ন আদালতের রায় (যাবজ্জীবন) ও আদেশ বহাল রাখা হয়।
এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর আপিল বিভাগে আবেদন করেন আজমত আলী।
২০১০ সালের ১১ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আপিলে আসা রায়ে হাইকোর্টের খালাসের রায় ও আদেশ রদ করে নিম্ন আদালতের রায় (যাবজ্জীবন) বহাল রাখা হয়।
আজমত আলী মুক্তির পর ওই লিভ টু আপিলের বিষয়ে আর খোঁজখবর রাখেননি তার পরিবারের সদস্যরা। এমনকি রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি তিনি বা বাদীপক্ষ কেউ-ই আদালতকে অবহিত করেননি।
পরে আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুনের আবেদনের পর বিষয়টি পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করা হয়। ২৭ জুন আপিল বিভাগ রিভিউ নিষ্পত্তি করে রায় দেয়।
রায়ে আজমত আলীকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার তাকে মুক্তি দেয় জামালপুর জেলা কারাগার কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমএ/