ঢাকা, সোমবার, ১৮ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৩ মার্চ ২০২৫, ০২ রমজান ১৪৪৬

জাতীয়

‘হাস্যোজ্জ্বল মুখটি আর দেখা যাবে না’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
‘হাস্যোজ্জ্বল মুখটি আর দেখা যাবে না’ কিবরিয়া সময় কাটাতেন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল হারুন অর রশিদ পুলিশ বক্সে। ছবি: বাংলানিউজ

বরিশাল: কাভার্ডভ্যানের চাপায় গুরুতর আহত বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট এস এম গোলাম কিবরিয়া মিকেল (৩১) হেরে গেছেন জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ে। তিনি যে এভাবে অকালে চলে যাবেন, ভাবতে পারেননি সহকর্মী, স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীসহ পরিচিত কেউই। সবার মনেই ভর করেছে শোকের ছায়া।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে কিবরিয়ার মৃত্যুর খবরের পরপরই শোকে স্তব্ধ হয়ে যান সহকর্মীরা। দায়িত্বকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি সময় কাটানো কাকলীর মোড়ের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল হারুন অর রশিদ পুলিশ বক্সে এসে অনেকেই খোঁজ নিচ্ছেন তার।

এসময় প্রিয় মানুষটির কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকেই।

কিবরিয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে ব্যাচমেট সার্জেন্ট টুটুল বাংলানিউজকে বলেন, কখনোই ভাবিনি, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখটি আর দেখব না। এত অল্প বয়সেই আমাদের ছেড়ে চলে যাবে, বুঝতেও পারিনি।

তিনি বলেন, সে আমাদের কত ভালোবাসতো, তা বলে বোঝানো যাবে না। কারণে-অকারণে কিবরিয়ার বরিশালের বাসায় আমরা কতবার গিয়েছি। এক মাসও হয়নি, ছেলের জন্মদিনে ওর বাসায় বন্ধুরা গিয়ে কত মজা করেছি!

সার্জেন্ট টুটুল বলেন, কোনো জায়গায় আড্ডা দিতে বসলে, সবার আগে বিলের টাকা বের করে দিত সে। যেখানে যে কারণেই দেখা, সব সময় হাসিমুখে কথার উত্তর দিত। কোনো দিন কারও সঙ্গে তার বিরোধ দেখিনি।

কিবরিয়ার কয়েক ব্যাচ সিনিয়র সার্জেন্ট কামরুল বাংলানিউজকে বলেন, সে (কিবরিয়া) এতটাই হাসিখুশি ছিল যে, ওকে যদি বকাঝকাও করতাম, তখনো হাসিমুখেই উত্তর দিত। যেকোনো বিষয় সে আমার সঙ্গে শেয়ার করতো। কাভার্ডভ্যান চাপা দেওয়ার আগে সকাল ১১টার দিকেও ওর সঙ্গে মোবাইলে শেষবারের মতো কথা হয়। তখনই ও জানিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দায়িত্ব পালন করছে। এরপর, হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থার মধ্যে আমাকে বলেছে, স্যার, আমার কোমরের নিচের অংশটা অবশ করে দিতে বলেন, কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।  

তিনি বলেন, গাছ লাগানো কিবরিয়ার শখ ছিল। তাই ,সুযোগ পেলেই গাছ লাগাত। নগরের চৌমাথা ও রুপাতলীতে পুলিশ বক্সের পাশেই বাদাম ও কৃষ্ণচুড়া গাছ লাগিয়েছে সে। দুই দিন আগে চৌমাথার পুলিশ বক্সের বাদাম গাছটি হেলে পড়ায়, সেটির গোড়ায় মাটি দিয়ে টবের মতো করে দিতে বলেছিল সে। ইচ্ছে ছিল, আমতলার মোড়ের পুলিশ বক্সের পাশেও একটি গাছ লাগাবে।

ব্যাচমেট সার্জেন্ট তারিকুল বলেন, সুখে-দুঃখে সবার পাশে থাকত কিবরিয়া। সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল তার। নিজের কাজকে ভালোবাসতো। শৃঙ্খলা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতো। দেশকে ভালোবাসতো, সে সঙ্গে আইনকে শ্রদ্ধা করতো।

পরিবার ও সহকর্মীদের থেকে জানা যায়, এস এম গোলাম কিবরিয়া মিকেলের জন্ম পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী ইউনিয়নের পূর্ব সুবিদখালী গ্রামে। দুই বোনসহ তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা ইউনুস আলী সরদার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কিবরিয়া স্কুলজীবন মির্জাগঞ্জে পার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সার্জেন্ট পদে যোগ দেন। যোগদানের পর থেকেই বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে ছিলেন। তিন বছর আগে ব্যাচমেট ট্রাফিক সার্জেন্ট মৌসুমী আক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ওহি নামে দুই বছরের এক সন্তান রয়েছে।

সোমবার (১৫ জুলাই) সার্জেন্ট গোলাম কিবরিয়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন জিরো পয়েন্ট এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে কাভার্ডভ্যানের চাপায় গুরুতর আহত হন। পরে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এমএস/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।