মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকার সঙ্গে দেওয়ানগঞ্জের রেল যোগাযোগ। এর আগে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানি ওঠায় ইসলামপুরের সঙ্গে দূরমুঠ, মেলান্দহের সঙ্গে মাহামুদপুর, দেওয়ানগঞ্জে সঙ্গে খোলাবাড়ী, বকশীগঞ্জে সঙ্গে সাধুরপাড়া সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
১৯৫০, ১৯৯৮, ১৯৮৮, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের সব রের্কড ভেঙে (মঙ্গলবার দুপুর ২টায়) জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্ট এলাকায় বিপদসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সবশেষ তথ্য মতে (বিকেল ৪টা), বান্যার কারণে জেলার প্রায় ৩ শাতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। দেওয়ানগঞ্জে রেল লাইনে পানি ওঠায় ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
দুপুরে রেল লাইন পরিদর্শন শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান জামালপুর টাউন জংশন স্টেশনের মাস্টার মো. শাহাবুদ্দিন। তিনি আরও জানান, রেল লাইনে পানি ওঠায় দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত রেল চলাচল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বেশ কয়েকটি স্থানে রেল লাইনে ওপর দিয়ে ২ ফুট পর্যন্ত পানি উঠায় সাময়িকভাবে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী ইসলামপুর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে জামালপুরে সার্বিক বন্যার আরও অবনতি হয়েছে। এ পর্যন্ত বন্যায় ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন কার্যত পানির নিচে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়, বাসভবন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয়সহ সব দাপ্তরিক কার্যালয় এখন বন্যা কবলিত।
ইত্যিমধ্যে আঞ্চলিক সড়কগুলোতে পানি ওঠায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭টি ইউনিয়নের প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়েছে বলে ইউপির চেয়ারম্যানরা জানিয়েছেন। উপজেলা সদর থেকে গুঠাইল বাজার, উলিয়া বাজার, শিংভাঙ্গা, কুলকান্দি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, বন্যায়, দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ী, বকশীগঞ্জ-সাধুরপাড়া, ইসলামপুর-উলিয়া এবং ইসলামপুর-গুঠাইল ও ইসলামপুর-কুলকান্দি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইসলামপুরের ৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের দক্ষিণ চিনাডুলি, দেওয়ানপাড়া, ডেবরাইপেচ, বলিয়াদহ, সিংভাঙ্গা, পশ্চিম বামনা, পূর্ববামনা, গিলাবাড়ী, সাপধরী ইউনিয়নের আকন্দ পাড়া, পশ্চিম চেঙ্গানিয়া, পূর্ব চেঙ্গানিয়া, ওকাশাড়ীডোবার, কুলকান্দি ইউনিনের বেরকুসা, টিনেরচর, সেন্দুরতলী, মিয়াপাড়া, বেলাগাছা ইউনিয়নের কাছিমারচর, দেলীপাড়, গুঠাইল, পাথর্শী ইউনিয়নের শশারিয়াবাড়ী, মোরাদাবাদ, মুকশিমলা, হাড়িয়াবাড়ীপশ্চিম মুজাআটা, নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের ওলিয়া, রামভদ্রা, কাজলার অঞ্চলগুলোর বিস্তীর্ণ জনপদে বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
গত তিনদিনে পানির তীব্র স্রোতে বেলগাছা ইউনিয়নের মন্নিয়ার চর, বরুল, চিনাডুলী ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া, নোয়াপাড়ার বৌশেরগড়সহ প্রায় শতাধিক বসতভিটা ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা আশপাশের উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। পশ্চিমাঞ্চলে ৮২টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় সেগুলো বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও পৌর শহরের নতুন নতুন এলাকা চাড়িয়া, মোজাজাল্লা, বেপারীপাড়া প্লাবিত হয়েছে বলে কাউন্সিলর অঙ্কন কর্মকার ও মহন মিয়া জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত ৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ হয়েছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সরকারি হিসাব অনুযায়ী যমুনা থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে ইসলামপুরের সাপধরী, চিনাডুলি, বেলগাছা, কুলকান্দি, নোয়ারপাড়া, পাথর্শী ওইসলামপুর সদর ইউনিয়নগুলোতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়েছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা, পিংনা, আওনা, ভাটারা ও কামরাবাদ ইউনিয়নে ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ও জনবসতি এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যায় বকশীগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৯
এসএইচ