রোববার (১১ আগস্ট) ঈদের আগের দিন। তাই অন্যদিনের তুলনায় এদিন ঘরমুখো যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়।
ভোর থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে ছেড়ে গেছে ১২টি লঞ্চ। অপেক্ষায় আছে আরও ৩০টি।
সরেজমিন সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। পন্টুনে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলগামী শত শত নারী-পুরুষ পরিবার-পরিজন ও মালামাল নিয়ে টার্মিনালে চলে আসেন।
যাত্রীদের হয়রানি রোধে নৌ-পুলিশের একাধিক দল নদীতে ও টার্মিনালে দায়িত্ব পালন করছে। টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। এছাড়া মাঝনদী থেকে যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা বন্ধে নৌ-পুলিশ তৎপর রয়েছে।
গার্মেন্টসে চাকরি করেন রাকিব উদ্দিন। লঞ্চে বাড়ি যাবেন। সেজন্য টার্মিনালে অপেক্ষা তার। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শ্রীনগর-৩ লঞ্চে লালমোহন যাবো। এখনও লঞ্চ আসেনি। আমার লঞ্চ ছাড়বে বিকেলে। কিন্তু যাত্রী ভরে গেলে যেকোনো সময়ই ছেড়ে দিচ্ছে। তাই গভীর রাত থেকে বসে আছি। লঞ্চ এলে কোনোরকমে পা রাখার জায়গা পেলেই বাড়ি যাবো। কষ্ট হলেও পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার আনন্দ কোনোভাবেই মিস করতে চাই না। শনিবার (১০ আগস্ট) পর্যন্ত গার্মেন্টসে কাজ করতে হয়েছে। তাই আজ যেভাবেই হোক বাড়ি যাবো।
দৌলতখান যাবেন সাকিবুল হাসান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ভোর ৫টায় টার্মিনালে এসে জানতে পারি আমার লঞ্চ ছেড়ে গেছে। তাই পরবর্তী লঞ্চের অপেক্ষা করছি। যানজটের কারণে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট আসতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে গেছে।
চাঁদপুরগামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহীন আহমেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলেও কিছু কাজ থাকায় এতোদিন বাড়িতে যেতে পারিনি। আজ কাজ শেষ করেই চলে এসেছি সদরঘাটে লঞ্চ ধরতে। টিকিট পেতে কষ্ট হয়েছে। কিছুটা বেশি দাম দিয়েই টিকিট কেটেছি। তবে ঈদে বাড়িতে যাচ্ছি এটাই স্বস্তির।
ভোলাগামী লঞ্চ এমভি ফারহানের যাত্রী ইব্রাহিম বাংলানিউজকে বলেন, পরিবার পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছি। কেবিনের টিকিট পাইনি। তাই মধ্যরাত থেকে লঞ্চে এসে বসে আছি। তখন এসে কোনরকমে একটু জায়গা পেয়েছি। এখনতো তিল পরিমাণ জায়গা নেই। এছাড়া বরিশাল যেতে ডেকের ভাড়া লঞ্চের কর্মচারীরা ২৫৫ টাকা দাবি করছেন। কিন্তু গত সপ্তাহেও এ ভাড়া ২০০ টাকা ছিল।
এমভি মানিক-১ লঞ্চের কর্মকর্তা আশিক বাংলানিউজকে জানান, তাদের লঞ্চের কেবিন ও সিট অগ্রিম বুকিং হয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও লঞ্চে যাত্রীদের জায়গা হচ্ছে না। তবে ডেকের যাত্রীদের নগদে টিকিট দেওয়া হলেও অতিরিক্ত যাত্রী হওয়ায় অনেকেই টিকিট ছাড়াই লঞ্চে উঠে পড়েছেন। কারো কাছ থেকেই অতিরিক্ত কোনো ভাড়া নেওয়া হয়নি। যারা টিকিট ছাড়া আছেন লঞ্চ ছাড়ার পর তাদের কাছ থেকে টিকিট কাটা হবে।
ঘাট কর্মকর্তা বিআইডব্লিটিএ’র ট্রাফিক ইন্সপেক্টো মো. হেদায়েত উল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, এপর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে একটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। আরো ৩০টি অপেক্ষমান। এগুলো রাত ১২টার মধ্যে ছেড়ে যাবে। সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, লালমোহন, মৃদ্ধারহাট, মুলাদি, বরগুনা, ভোলা, শৈলা ও শরীয়তপুরের লঞ্চ ছেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, দিনের তুলনায় রাতে বেশি যাত্রী নিয়ে সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। এছাড়াও লঞ্চ বেশি থাকার জন্য যাত্রীদের ওঠানামা করতে বেশ অসুবিধা হচ্ছে। গতকাল দিন রাতে মিলিয়ে লঞ্চ এসেছে ১২৮টি, ছেড়ে গেছে ১৫৪টি। যা এর আগের দিন শুক্রবার থেকে বেশি। শুক্রবার লঞ্চ ছেড়ে গেছে ১৫০টি। যাত্রীদের নিরাপত্তায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং হচ্ছে। আশা করছি যাত্রীরা নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারবে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, ঢাকা নৌবন্দরের হিসেবে এ বছর ঈদ করতে সদরঘাট হয়ে ঘরে ফিরবেন প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। ৪৩টি রুটে প্রতিদিন লঞ্চ চলবে ২১৫টি।
ঢাকা নৌবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, এ ঈদে ঢাকা-বরিশাল রুটে লঞ্চ চলবে ২৩টি, ঢাকা-চাঁদপুর রুটে ২৫টি, ঢাকা-পটুয়াখালী রুটে ১৩টি, ঢাকা-হুলারহাট-ভান্ডারিয়া রুটে ১০টি এবং ঢাকা-ভোলা রুটে আটটি। শুধু তাই নয়, এবার ঈদের সময় ঝড়-বৃষ্টির শঙ্কা রয়েছে। তাই নৌপথে চলাচলে কিছু সতকর্তার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৯
জিসিজি/জেডএস