অবকাঠামোগত কিছু কাজ বাকি ছিল। চলতি বছর সেটাও শেষ হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, নরসিংহপাড়া, শুকলাই ও শুকলহাট- চলনবিলের নিভৃতপল্লির এই তিনটি গ্রামে সাড়ে চার হাজার মানুষের বাস। বছরের ৫/৬ মাস এ গ্রামগুলোর মাঠ-ঘাট পানিতে ডুবে থাকে। নৌকাই এ অঞ্চলের একমাত্র যানবাহনে পরিণত হয় তখন। তিন গ্রামের মুসল্লিদের জন্য ১৩ শতক জমির একমাত্র ঈদগাহ মাঠটি জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পানিবন্দি থাকে। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে ঈদ হলে মাঠে নামাজ পড়তে পারতেন না মুসল্লিরা। এসময় তারা মসজিদে কিংবা অন্য কোনো উঁচু স্থানে ঈদের নামাজ পড়তেন। অনেকেই আবার সারি সারি নৌকার উপর ঈদের নামাজ আদায় করতেন।
তিন গ্রামের মুসুল্লিদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০১২ সালে ব্যারিস্টার রওশন জাহান ফাউন্ডেশনের ব্যানারে সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম একটি ভাসমান ঈদগাহ করার পরিকল্পনা করেন। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ। পরে এলাকাবাসী ঈদগাহ নির্মাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। এতে দেড় বছরের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকা জমা হয়। ১৩ শতক জমির সঙ্গে আরও ৯ শতক কেনা হয়।
২০১৬ সালে তিন গ্রামের সবচেয়ে বয়স্ক ছয়জন মুরুব্বি এটির নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। সাড়ে নয় হাজার বর্গফুট আয়তনের দ্বিতল ঈদগাহের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। মূল গেটসহ ১০ ফুট উচ্চতার মোট ৪৪টি আরসিসি কলাম রয়েছে এতে। তার ওপর দেওয়া হয় ছাদ। চলতি বছরের জুন মাসে এটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়।
ঈদগাহটির অভিনব নির্মাণশৈলীও দর্শনীয়। পানির ওপর দণ্ডায়মান ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। এদিকে পানির উপর পিলার গেঁথে অভিনব শৈলীতে নির্মিত এ ঈদগাহটি দেখতে দূর-দূরান্তের মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছেন।
নরসিংহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও সাংবাদিক মোস্তফা জাহাঙ্গীর আলম জানান, দেশ-বিদেশের বন্ধু-বান্ধব ও এলাকাবাসীর সহায়তায় ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঈদগাহটি নির্মিত হয়েছে। এবার ঈদুল আজহায় মাঠে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
ঈদগাহ কমিটির সভাপতি আফজাল হোসেন, সম্পাদক আজিজুল হক ও সদস্য আবদুর রশিদ জানান, তিন গ্রামের লোকজন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী গ্রামের লোকরাও এখানে উৎসাহী হয়ে নামাজ আদায় করতে আসেন। চলনবিলের বুকে নির্মিত এ ব্যতিক্রমী দ্বিতল ঈদগাহটিকে দেখতে বর্ষা মৌসুমে অনেক দর্শনার্থী প্রতিদিন ভিড় জমান।
বড় পাঙ্গাসি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির লিটন বাংলানিউজকে বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। অত্র অঞ্চলের মানুষের ঈদের নামাজের জন্য একটি জায়গা হলো। তেমনি এলাকায় একটি ঐতিহ্যপূর্ণ স্থাপনাও হিসেবেও পরিগণিত হবে এটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৯
এএ