সার্কিট হাউজের আশপাশের ছোট হাটগুলো থেকে গরু নিয়ে খুশিমনে বাড়ি ফিরছেন ক্রেতারা। কিন্তু, ভালো বিক্রির আশায় বড় হাটে এসেও গৃহস্থ-ব্যাপারীদের মুখ এখন বেজার।
সন্ধ্যার পর হাটের চিত্র না ঘুরলে শেষ পর্যন্ত চোখে পানি নিয়েই হাট ছাড়তে হয় কি-না, এমন শঙ্কা তৈরি হয়েছে অনেকের। তারা এখন সব কিছু ভাগ্যের ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন।
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক দফা নগরীর সার্কিট হাউজ মাঠ ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।
জেলার হালুয়াঘাট উপজেলা থেকে গরু নিয়ে এসেছেন আব্দুস সালাম (৪০)। প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে অলস বসে আছেন। হাটের কোথাও জমজমাট বেচাকেনা নেই। তিনি বিষণ্ন মনে বাংলানিউজকে বলেন, হাটে গরুর অভাব নাই। কিন্তু, কেনার মানুষ নাই। ইজারাদার কইছে, সন্ধ্যার পর বেচা জমবো।
শেরপুরের নালিতাবাড়ি থেকে আসা মুকুল মিয়া (৩৫) বাংলানিউজকে বলেন, হাটে মোট নয়টি গরু এনেছি। বিক্রি হয়েছে মাত্র দু’টি। বাকি সাতটির দামই উঠছে না। একদিনের ব্যবধানে দাম কমে গেছে অনেক।
তারাকান্দা উপজেলার হাফিজুল ইসলাম নিজের মোটাতাজা গরুটি দেখিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে বলেন, তিন দিন আগে তারাকান্দার হাটে গরুটির ২ লাখ ৬ হাজার টাকার ক্রেতা মিলেছিল। কিন্তু, আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় বিক্রি না করে ভুল করেছি। এ হাটে দাম বাড়ার বদলে কমেছে। আসলে আমার কপালই খারাপ। নয়তো এখন ক্রেতারা দাম বলছেন মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা!
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া থেকে আসা শরিফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, হাটে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। ৮০ হাজার টাকার গরু ৬০ বা ৬৫ হাজার টাকায় দরদাম করছে ক্রেতারা।
তার কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থানীয় চরগোবিন্দপুর এলাকার গৃহস্থ উসমান মিয়া বলেন, বাজার ড্যাম। বেচাকেনায় যুইত নাই। কিন্তু আশপাশের গরুর বাজার বাম্পার মারছে।
খানিক এগোতেই গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলার শহীদুল ইসলাম, আলাল উদ্দিনসহ কয়েক গৃহস্থকে গরু খুঁটিতে বেঁধে ঘুমাতে দেখা গেল। ক্রেতা এসেছে ভেবেই গালভরা হাসি শহীদুলের মুখে। কিন্তু, নিমিষেই উবে গেল তা। বললেন, চার দাঁতের গরু যেখানে ৯৫ হাজার টাকায় বেচার কথা, সেখানে ক্রেতা ৭০ হাজার বলেই ছুট দেন।
বেজার মুখে শহীদুল আবারও ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কথা বলতে চাইলে অগ্নিশর্মা হয়ে বলেন, একটা গরু লালন-পালনে কত খরচ! দৈনিক ৫শ’ টাকা খরচা আছে। এছাড়া পরিবহন ও শ্রমিক খরচও আছে। কিন্তু, ক্রেতারা চান পানির দরে গরু কিনতে। আমগোর কষ্ট কেউ বোঝে না।
হাটে গরু কিনতে আসা সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, সার্কিট হাউজ মাঠে গরুর বাজার গরম। কিন্তু, অন্য হাটে একই গরু আরও কম দামে মিলছে। এজন্য সবাই গ্রামাঞ্চলের হাট থেকেই গরু কিনছেন।
বাংলাদেশ সময় ১৯৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৯
এমএএএম/একে