শুক্রবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে চলন্তিকা ঝিলপাড় বস্তিতে। এরইমধ্যে এই অগ্নিকাণ্ড ষড়যন্ত্রমূলক বলে অভিযোগ করেছেন বস্তিবাসী।
কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২৫-৩০ বিঘা জায়গার ওপর গড়ে ওঠে এই বস্তি এলাকা। প্রায় ৩০ হাজার ঘর আছে এখানে। বস্তিবাসী এবং আশপাশের এলাকার মানুষজন বলছেন, প্রতিটি ঘরেই ছিল গ্যাসের সংযোগ। অভিযোগ আছে, স্থানীয় ‘নেতারা’ই নিয়ন্ত্রণ করতেন গ্যাসের অবৈধ এই ব্যবসা। বস্তির ঘরগুলো থেকে প্রতি চুলায় এক হাজার টাকা করে বিল আদায় করতেন নেতাদের লাইন ম্যান। সেই হিসেবে মাসে দুই কোটি টাকারও বেশি অবৈধ গ্যাস বিলের দারুণ এক ব্যবসা ক্ষেত্র ছিল মিরপুরের সবচেয়ে বড় এই বস্তি।
সালমা নামের বস্তির এক বাসিন্দা বলেন, সরকার খালি বলে অবৈধ অবৈধ, এগুলাতো নেতা-ফেতারা খাইতেছে। আমরা কি অবৈধ রাখছি, নাকি নেতা-ফেতারা অবৈধ রাখছে? আমরাতো বিল দেই। পানির বিল দেই, বিদ্যুতের বিল দেই, গ্যাসের বিল দেই। এক চুলায় এক হাজার টাকা করে বিল খাইছে (লাইন ম্যানরা)।
বস্তির আরেক বাসিন্দা সুমিও এর সঙ্গে যোগ করে বলেন, আমরাতো সবকিছুর বিল দিছি।
কাদের কাছে এসব বিল দিয়েছেন, আর নেতারাই কারা এমন প্রশ্নের জবাবে সালমা বলেন, এইডির নাম বলা যাবে না। নেতা-ফেতার নামের অভাব নাই। আশেপাশেই থাকে, এডি কি দূরে থাহে?
নাম প্রকাশে জীবনের ঝুঁকি আছে উল্লেখ করে সুমি বলেন, নাম না নেওয়াতেই এতকিছু, নাম নিলে তো আমগো মাইরাই ফালাইব।
তবে পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক বস্তিবাসীদের কয়েকজন বলেন, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট একাধিক গ্রুপ সমঝোতার ভিত্তিতে এলাকা ভাগ করে বস্তির এই অবৈধ গ্যাসের বাণিজ্য পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতেন। কেউ কেউ অভিযোগের তীর তাক করেন স্থানীয় কাউন্সিলর মো. রজ্জব হোসেনের দিকে।
তবে সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কাউন্সিলর রজ্জব হোসেন। অবশ্য বস্তিতে এই অবৈধ ব্যবসা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি বা আমাদের দলের কোনো সদস্য এই টাকা নেয় না। বিএনপির লোকজন বস্তি থেকে এই টাকা খায়। কিছু আছে যারা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ বা এসবের লেবাসধারী, পরিচয় দিয়ে এই টাকা নেয়। এরা এসব সংগঠনের প্রাথমিক সদস্যও না। এদের পরিচয় ঘাটেন যে এরা আগে কি করতো। দেখা যাবে বিএনপি’র, ছাত্রদলের বা যুবদলের।
অন্যদিকে বস্তিতে গ্যাসের অবৈধ কোনো সংযোগই নেই দাবি করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (ঢাকা-১৬) ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা। এক প্রশ্নের জবাবে এই সংসদ সদস্য বলেন, কেউ যদি বলে এখানে গ্যাসের অবৈধ লাইন আছে, আমি আজও পাইনি। কারণ আমি এই এলাকায় বসবাস করি। প্রত্যেকটা মানুষের খোঁজখবর রাখি। এরপরেও কেউ যদি বলে থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তিটা কে আমাকে দেখতে হবে।
ইলিয়াস মোল্লা আরও বলেন, কাউকে গ্যাসের লাইন নিতে হলে তার বাড়ির ঠিকানা লাগে, বিদ্যুৎ বিল লাগে, দলিলপত্র লাগে, পর্চা লাগে। তিন বছর ধরে গ্যাস (সংযোগ দেওয়া) টোটালি বন্ধ। বাট এখানে কোনো অবৈধ গ্যাস নাই।
অবৈধ গ্যাস সংযোগ নিয়ে জানতে চাইলে তদন্ত প্রতিবেদনের পর জানা যাবে বলে জানিয়েছেন তিতাসের ঢাকা মেট্রো বিপণন বিভাগ-৬ (মিরপুর-১০) এর উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। অনেক এলাকা চিনিও না এখনও। তাই বলতে পারছি না। রূপনগরের ঘটনায় আমাদের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়েছে। তারা আজ ঘটনাস্থলেও গিয়েছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এই অবৈধ সংযোগের বিষয়ে জানা যাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস