আজ রোববার (১৮ আগস্ট) রক্তাক্ত সেই ঘটনার এক বছর পূর্ণ হলো। তবে, বছর পেরিয়ে গেলেও নৃশংস ওই ঘটনার কোনো ‘ক্লু’ বের করতে পারেনি পুলিশ।
মামলাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, স্থানীয়দের অসহযোগিতার কারণে মামলার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে দীর্ঘ সময়েও মামলার কোনো অগ্রগতি না দেখে হতাশ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট সকালে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের স্বনির্ভর বাজারে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলে ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের পাহাড়ি ছাত্রপরিষদ ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতাসহ ৬ জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন- পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা কমিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন ত্রিপুরা (২৮), গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি পলাশ চাকমা (৩০), পিসিপির খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সাধারণ সম্পাদক এল্টন চাকমা (২২), জেলা সদরের উত্তর খবংপুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা (৫৩), একই গ্রামের কান্দারা চাকমার ছেলে রুপম চাকমা (২০) এবং ধীরাজ চাকমা (২৭)। এ ঘটনায় আহতরা হলেন- সমর বিকাশ চাকমা (৪৮), সুকিরন চাকমা (৩৫) ও সোহেল চাকমা (২২)।
পলাশ চাকমা, জিতায়ন চাকমা ও ধীরাজ চাকমার মরদেহ ঘটনাস্থলের স্বনির্ভর মোড় থেকে, তপনের মরদেহ ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনের মাঠের বাউন্ডারির পাশ থেকে, এলটনের মরদেহ কার্যালয়ের বাম দিকের পুকুরপাড় থেকে, রুপম চাকমার মরদেহ তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। শুরুতে সন্ত্রাসীরা স্বনির্ভর এলাকায় অবস্থিত পুলিশের চেকপোস্ট লক্ষ্য করে গুলি করে। অপরদিকে পেরাছড়ায় পৃথক হামলায় শন কুমার চাকমা (৫৫) মারা যান। সেসময় এ ঘটনার জন্য প্রসীত গ্রুপের পক্ষ থেকে এমএন লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দায়ী করা হয়।
নিহত জিতায়ন চাকমার স্ত্রী প্রভাতি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তিনি সাধারণ একটি চাকরি করতেন, যা দিয়ে আমাদের পুরো সংসার চলতো। পেনশনের কিছু টাকা পেয়েছিলাম। যা দিয়ে ধার-দেনা পরিশোধ করতে হয়েছে। বর্তমানে ঘর-ভিটে ছাড়া কিছুই নেই। আমার তিন মেয়েকে নিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাতে হচ্ছে।
এ ঘটনায় সে সময় মোট তিনটি মামলা হয়। একটি সদর থানায়, অপর দু’টি আদালতে। এরমধ্যে ঘটনার দিন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে বাদী না হওয়ায় উপ-পরিদর্শক (এসআই) গৌতম চন্দ্র দে বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় একটি মামলা করেন।
ওই মামলায় ১৫-২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দেখানো হলেও ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে যে দু’টি মামলা হয়েছে সেখানে নামোল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে বান্দরবানের বাসিন্দা ওসিং সই চাক ৫৬ জনের নামোল্লেখ করে মামলা করেন। অপরদিকে খাগড়াছড়ির বাসিন্দা মিঠুন চাকমা ২৭ জনের নামোল্লেখ করে আরেকটি মামলা করেন। দু’টো মামলায় এমএন লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা তাতিন্দ্র লাল চাকমা ওরফে মেজর পেলে, প্রজ্ঞান খীসা ও বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমাসহ অনেকের নামোল্লেখ করা হয়। চলতি বছরের ১৮ মে মামলা তিনটির তদন্তভার চট্টগ্রাম পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক বাংলানিউজকে বলেন, মামলাগুলো হাতে পাওয়ার পর আমরা বেশ কয়েকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিন্তু ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা স্থানীয় কেউ এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। যার কারণে রহস্য উদঘাটনে সময় লাগছে। তবে আমরা আশা করি সহসা রহস্য উদঘাটন করতে পারবো।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার (এসপি) আহমারউজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত সংস্থা পিবিআইর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয়রা সহযোগিতা করলে আমরা আরও আগে মামলার রহস্য উদঘাটন করতে পারতাম। তারপরও আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। তদন্ত চলছে। আশা করি প্রকৃত খুনিদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।
নারী নেত্রী নমিতা চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, আঞ্চলিক সংগঠনের সহিংসতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অসহায় হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ভয়ে বিচারও চাইতে পারছে না। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর চলমান বিবাদ রাজনৈতিক সমস্যা, এটা রাজনৈতিকভাবে নিরসন করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৯
এডি/এইচএডি/এইচএ/