ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির মুখে: প্রধানমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯
সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির মুখে: প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ছবি: পিআইডি

ঢাকা: সমুদ্রকেন্দ্রিক অপরাধ ও দূষণ বিষয়ে সবাইকে সর্তক হওয়ার পাশাপাশি এসব বন্ধে সব দেশকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির মুখে।

বৃহস্পতিবার (সেপ্টেম্বর ৫) সকালে রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তৃতীয় ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের (আইওআরএ) মন্ত্রী পর্যায়ের ‘সুনীল অর্থনীতি সম্মেলন’ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের দূষণসহ মানবসৃষ্ট নানা কারণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্যি যে মনুষ্য-সৃষ্ট নানা কারণে আমাদের সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন।

তিনি বলেন, মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ আহরণ, পরিবেশ দূষণ, তেল নিঃসরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা দূষণ, শব্দ দূষণ ও সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন এসবের অন্যতম কারণ। এরফলে সাগর/মহাসাগরের উষ্ণতা বাড়ছে এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

‘শুধু তাই নয়, বেশিরভাগ আইওআরএ (IORA) সদস্যভুক্ত দেশগুলো সুনামি ও সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারাও আক্রান্ত হয়। ’

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎকে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে এবং মানবজাতিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আসন্ন বিপর্যয় মোকাবিলায় সবাই মিলে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাগর ও মহাসাগর গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশই শোষণ করে। Marine Ecology (সমুদ্র বাস্তুতন্ত্র) ধ্বংস হলে মানবজাতির অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়বে।

‘অতিসত্বর সবাই মিলে এই বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। ’

সমুদ্রকেন্দ্রিক অপরাধের বিষয়ে সবাইকে সর্তক এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রকে কেন্দ্র করে সংগঠিত সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের সতর্ক হতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে, মহাসাগর ও তার বিপুল সম্পদ সংরক্ষণে আমরা যত বেশি বিনিয়োগ করবো, যত বেশি পদক্ষেপ নেবো তা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে।  

ক্ষতিকর উপায়ে সমুদ্র সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের নেওয়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রের জৈবসম্পদ সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার মৎস্য আহরণের সব ধরনের ক্ষতিকারক পদ্ধতি ও উপায়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং অন্যান্য অপরাধ দমনেও কার্যকর আইন প্রণয়ন করেছে।

তিনি বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের মধ্যে একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে যেন সমুদ্রের সুস্থ পরিবেশ বিঘ্নিত না হয়। তাই আমাদের সুনীল অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পাশাপাশি সুনীল চিন্তাও করতে হবে।

‘সে লক্ষ্যে সমন্বিত, লাভজনক ও সর্বোপরি সমুদ্র সংরক্ষণমূলক নীতি নির্ধারণ ও সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে হবে। ’ 

সম্মেলনের সফলতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন যাতে এই অঞ্চলে একটি অভিন্ন টেকসই সুনীল অর্থনৈতিক বেষ্টনী গড়ে ওঠে।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী যে এ সম্মেলন শেষে ‘ঢাকা ঘোষণা’ হিসেবে যা গ্রহণ করা হবে সেটি ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারবো।

সমুদ্রে থাকা বিশাল সম্পদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাগর ও মহাসাগর হলো মানবজাতির জন্য অবারিত সম্পদ ও অপার সম্ভাবনার উৎস। এর অনেকাংশই এখনও অনাবিষ্কৃত অবস্থায় রয়েছে। সমুদ্র কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্পগুলো যেমন- পণ্য পরিবহন, মৎস্য শিল্প, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র বন্দর, পর্যটন, মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস, মেরিন বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অবদান রাখছে।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ এই সাগর-মহাসাগর দিয়েই হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে সমুদ্র বাণিজ্যের পরিমাণ ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।

একীভূত টেকসই সুনীল অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুফল পেতে অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনীল অর্থনীতিকে সামনে রেখে সমুদ্রে অব্যবহৃত ও এর তলদেশে অ-উন্মোচিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এ অঞ্চলে যার যার টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করার সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি।  

বাংলাদেশ আগামী ১ অক্টোবর দু’বছরের জন্য আইওআরএ’র সহ-সভাপতি এবং  ১ অক্টোবর ২০২১ পরবর্তী দু’বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

বাংলাদেশের এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, আইওআরএ চেয়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান পরিবেশ, বন ও মৎস্য বিষয়ক উপমন্ত্রী মাখোটসো ম্যাগডলিন সোতিয়ু, আইওআরএ মহসচিব রাষ্ট্রদূত ড. নমভুয়িও এন নকউই, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষ (আএসএ) মহাসচিব মাইকেল ডাব্লুউ লজ।

পররাষ্ট্র সচিব (সমুদ্র বিষয়ক ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশীদ আলম স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে আওআরএ সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
এমইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।