পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুরের কাটাসুর, চাঁদ উদ্যানসহ আশপাশের এলাকার কিশোর গ্যাং ‘ফিল্ম ঝির ঝির’ গ্রুপের সদস্য ছিলেন মহসিন। একই এলাকার ‘আতঙ্ক’ নামে আরেকটি গ্রুপের সদস্যদের হাতেই খুন হন তিনি।
গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের সাত মসজিদ হাউজিংয়ের পাওনিয়ার গলিতে মহসিনকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার বড়ভাই ইউসুফ আলী বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত সবশেষ খবর অনুযায়ী, এজাহারনামীয় আসামি আসিফ (১৮) ও রকিকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্ত তদারকির দায়িত্বে থাকা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বুধবার বিকেল তিনটার দিকে এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকা উদ্যান এলাকায় ঘুরতে যায় মহসিন। এসময় ওই এলাকায় হাজির হয় পারভেজ নামে একজন। তারা একই এলাকার বাসিন্দা ও পূর্বপরিচিত।
‘একপর্যায়ে কোনো বিষয় নিয়ে মহসিনের সঙ্গে পারভেজের প্রচণ্ড বাকবিতণ্ডা হয়। এখানে উপস্থিত মেয়েটিকে ইভটিজিং বা অন্য কোনো বিষয় থাকতে পারে- যা এখনো স্পষ্ট নয়। দুই জনের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে ওই জায়গা থেকে চলে যায় পারভেজ। পরে, সঙ্গীদের ডেকে এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে উদ্বুদ্ধ করে সে। সন্ধ্যার পর পারভেজ দলবল নিয়ে চাঁদ উদ্যান এলাকায় যায়। সেখানে মহসিনকে পেয়ে ১৫-২০ জন মিলে প্রথমে মারধর ও পরে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। তখন মহসিনকে বাঁচাতে তার তিন বন্ধু এগিয়ে গেলে তারাও আহত হয়। ’
তিনি বলেন, পারভেজের নেতৃত্বে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক। পারভেজ ও তার সঙ্গীরা ‘আতঙ্ক’ ও নিহত মহসিন ‘ফিল্ম ঝির ঝির’ নামে দু’টি গ্রুপের সদস্য। তবে, অন্য সক্রিয় গ্যাং গ্রুপের মতো তাদের তেমন কোনো কাঠামো পাওয়া যায়নি। এর আগে তাদের কোনো সক্রিয় কার্যক্রমেরও তথ্য নেই। ভার্চুয়াল জগতেও তাদের খুব একটা তৎপরতা ছিল না। সম্ভবত তারা একত্রিত হয়ে একটা নাম নিয়ে চলাফেরা করতো।
ওই কর্মকর্তা বলেন, এ দু’টি গ্যাং গ্রুপের বেশিরভাগই স্কুলপড়ুয়া ও বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান। তারা মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় বসবাস করে। গ্রেফতার আসিফের বাবা মাছ ব্যবসায়ী ও রকির বাবা গার্মেন্টসকর্মী। তারা খুবই সাধারণ পরিবারের সন্তান। তবে, তাদের বিরুদ্ধে আগের কোনো অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ওয়াহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, প্রাথমিকভাবে পূর্বশত্রুতার জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মামলার এজাহারভুক্ত দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। এছাড়া, মূলহোতা পারভেজসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ছুরিকাঘাতের পর গুরুতর আহত অবস্থায় মহসিনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি স্থানীয় চাইল্ড হ্যাভেন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।
আহত তিন জনের মধ্যে সাব্বির (১৭) ও রাকিব (১৭) সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এবং রুবেল (২৩) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আহত সাব্বির ও রাকিব মহসিনের সহপাঠী। রুবেল একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে চাকরি করেন।
আরও পড়ুন> কিশোর গ্যাং কোন্দলে স্কুলশিক্ষার্থী খুন, আটক ৪
বাংলাদেশ সময়: ২২০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৯
পিএম/একে