ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

দুর্যোগে অসহায় মানুষের বন্ধু ‘এসবি ফাউন্ডেশন’

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৯
দুর্যোগে অসহায় মানুষের বন্ধু ‘এসবি ফাউন্ডেশন’

রাজশাহী: ‘মানব সেবাই বড় ধর্ম’। পৃথিবীতে মানবসেবায় নিজেকে পুরোপুরি বিলিয়ে দেওয়া মানুষের সংখ্যা এখন বলা যায় হাতেগোনা। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মেই মানবসেবার কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সে অনুভূতিকে ধারণ ও লালন করে সাহায্যকারী বন্ধু হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘এসবি ফাউন্ডেশন’।

যেখানেই হতদরিদ্র, বঞ্চিত ও অসহায় মানুষ, সেখানেই কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে দুর্যোগে অসহায় মানুষের সেবায় সেচ্ছাসেবী এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

কখনও ছুটে যাচ্ছে বন্যাকবলিত অসহায় মানুষের জন্য ত্রাণ নিয়ে, কখনও পরিচালনা করছে শীতবস্ত্র বিতরণ, কখনো ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে তুলে দিচ্ছে একমুঠো খাবার, আবার কখনও নগদ অর্থ দিয়েও বাড়িয়ে দিচ্ছে সাহায্যের হাত।

ছোট পরিসরে ২০০৬ সালে রাজশাহীর পবা ও মোহনপুর উপজেলা কেন্দ্রীক কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এর পর ধীরে ধীরে এর ব্যাপ্তি বিস্তৃত হয়। কেবল রাজশাহীই নয়, উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলায় হতদরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করছে। শুধু তাই নই, দেশের গন্ডি পেরিয়ে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে এসবি ফাউন্ডেশনের সেবামূলক এ কার্যক্রম।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় এখন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে। ভাগ্য যাদের অনুকূলে নেই, তাদের এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাওয়া ‘এসবি ফাউন্ডেশনের’ স্বপ্নদ্রষ্টা প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। তাদের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরুর পর থেকে বর্তমান অবস্থায় আসা, মানুষের জন্য কাজ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পরিকল্পনার গল্প শোনান তিনি।

স্কুল-কলেজ জীবন থেকে তিনি গরিব, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মানুষের জন্য কাজ করার এ মানসিকতা ও সামাজিক দায়বদ্ধতাই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ‘এসবি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার। তাই প্রথমে সে কথাই উল্লেখ করেন শাহাবুদ্দিন বাচ্চু।

যাত্রা শুরু বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুরুর কথা বলতে গেলে আমার স্কুল-কলেজ জীবনের কথা বলতে হবে। যখন আমি ছাত্র রাজনীতি করতাম, তখন থেকেই মানুষের জন্য নিজের ভেতর ভালোবাসা কাজ করতো। একটি বিষয় আমি সবসময় লক্ষ্য করেছি, আমরা নিজেদের জন্য সবকিছু করছি। অথচ আমাদের প্রতিবেশী ঠিকমতো তিনবেলা খেতেও পায় না। মানুষের এ ধরনের মনমানসিকতায় আমি কষ্ট পাই। মানুষের প্রতি মানুষের যে সামাজিক দায়বদ্ধতা। ছোটবেলা থেকেই আমার ভেতরে তা কাজ করতো’। আর সেই চিন্তা থেকেই এসবি ফাউন্ডেশনের ভাবনা বলেন বাচ্চু।

তিনি জানান, প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার মানুষকে খাবার দেওয়ার পাশাপাশি শীতবস্ত্র বিতরণ, স্কুলগামী বাচ্চাদের ব্যাগ দেওয়াসহ বিভিন্ন সেবামূলক কাজ করেন।
শিক্ষার্থীদের স্কুলব্যাগ দিচ্ছে ‘এসবি ফাউন্ডেশন’, ছবি: বাংলানিউজ
২০০৬ সালে বৃহৎ পরিসরে কাজ করার পরিকল্পনা মাথায় আসে তার। এরই ধারাবাহিতায় সামজিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে ফাউন্ডেশন আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আমরা একটি সেমিনারের আয়োজন করি। সেখানে প্রাথমিকভাবে রাজশাহীর পবা ও মোহনপুর উপজেলা কেন্দ্রীক কমিটি করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে রাজশাহী জেলা ও ৯টি উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়। আস্তে আস্তে আমরা কার্যক্রম পুরো রাজশাহী বিভাগে প্রসারিত হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের বিস্তৃতি রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬টি জেলায় ছড়িয়েছে'।

এর পর ২০১৫ সালে শাহাবুদ্দিন বাচ্চু যুক্তরাষ্ট্র যান। সেখানে কয়েকজন প্রবাসী যুক্তরাষ্ট্রে ‘এসবি ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব রাখে। চলতি বছর তারা নিউইয়র্কে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করেন। গত ৭ জুলাই তার অনুমোদন পান। প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রে হওয়ায় এখন বাংলাদেশে শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তাই ফাউন্ডেশনের নামেও পরিবর্তন এসেছে। আগে ফাউন্ডেশনের নাম ছিলো- ‘এসবি ফাউন্ডেশন, রাজশাহী’। এখন নামকরণ করা হয়েছে ‘এসবি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ’।
 
বাচ্চু বলেন, চলতি বছরে রংপুর বিভাগের কয়েকটি বন্যাপ্লাবিত এলাকায় সবার সহযোগিতার মাধ্যমে এক হাজার ডলার ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। সেখানে মানুষের মধ্যে চাল-ডাল, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস বিতরণ করেছি। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিটি জেলায় শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বছরের শেষ দিকে শীত পড়লে আবারও শীত বস্ত্র বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি বছরের শুরুতেই গরিব শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুলব্যাগ বিতরণ করা হয়।

নিজের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করে চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিন বাচ্চু বলেন, 'এসবি ফাউন্ডেশন আমার স্বপ্ন। এক সময় দেশের মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আসার পর থেকে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়েছে। তবে দেশের মানুষের উন্নয়ন হলেও, এখনও প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। এসব মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করাই আমাদের লক্ষ্য’।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৯
এসএস/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।