হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আব্দুস ছত্তার বললেন, ‘ও হাসিনা আমারে দেখে যাও- আজ আমি মৃতপ্রায়। এই বুঝি মারা যাবো।
‘যখন যৌবন ছিল, শক্তি ছিল তা দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশ স্বাধীন তাই আজ বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করতে পারছি আমরা। কিন্তু আজ অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এত মানুষদের আর্থিক সহায়তা করছেন, আমি শেষবারের মতো হলেও শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে চাই। ’
এক সময়ের সাহসী যোদ্ধা আজ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত। রক্তশূন্যতা, হার্ড ব্লক, লিভারের সমস্যাসহ নানা রোগ নিয়ে বাঁচার লড়াই করছেন তিনি। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাননি তিনি। মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। কিন্তু এখনো তিনি সেরে ওঠেননি। এ কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় উন্নত চিকিৎসার জন্য অনুরোধ করছেন। আর্থিক অনটনে এখন পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেডে শুয়ে বাঁচার লড়াই করে যাচ্ছেন এ বীর মুক্তিযোদ্ধা।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন আব্দুর ছত্তারকে দেখতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমাযুন কবির, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভিন, সামাজিক সংগঠন আস্থা, প্রত্যয়ের কর্মকর্তারা। তারা কর্তৃপক্ষকে এ মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার অনুরোধ করেন।
পাথরঘাটা উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন বলেন, ওনার অবস্থা গুরুতর দেখে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছত্তার অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছে না।
পাথরঘাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার ও জেলা পরিষদের সদস্য এমএ খালেক বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ৩ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নেন। এখন তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার উন্নত চিকিৎসা দরকার।
পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আব্দুস ছত্তার সাহেবের অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ওনাকে দেখতে যাই। উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে যা করা দরকার সবই করবো।
আব্দুস ছত্তারের যুদ্ধকাল:
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কাল রাত। রাত যখন গভীর তখন বিজিবির হেডকোয়ার্টার পিলখানায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী হামলা করে তখন আব্দুস ছত্তারের দুই পায়ে গুলি লাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আহতাবস্থায় তৎকালীন অস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের বাসায় নিয়ে প্লাটুন কমান্ডার এম.এ সাঈদের নেতৃত্বে চিকিৎসা করিয়ে মোটামুটি সুস্থ করে তোলেন। পরে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছত্তার স্বাধীনতার আগে তৎকালীন ইপিয়ার বাংলাদেশ রাইফেলস বর্তমান বিজিবি (বিডিআর নং-১৪৫৭৪) চাকরি করার সময় ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩নং সেক্টর কমান্ডার এম এ সাঈদের নেতৃত্বে যুদ্ধে অংশ নেন। তার মুক্তিযোদ্ধা গেজেট নং- (বর)-১০৪০, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট নং- ১৮১১৯ (৮ খন্ড)। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৬নং বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। কিছুদিন চাকরি করার পর তৎকালীন সেক্টর কমান্ডারসহ অনেক অফিসারের দুর্নীতি প্রকাশ পায়। এর প্রতিবাদ করলে তাকে জোরপূর্বক পাগল দেখিয়ে ১৯৭৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। আজ পর্যন্ত তিনি অবসর ভাতা থেকেও বঞ্চিত।
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছত্তার অসহায় দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্র। তিনি এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। অনেক কস্ট এবং ত্যাগের বিনিময় এ সংঠনটি প্রতিষ্ঠান করেন ১৯৯৫ সালে। সংগঠনের অফিস তৎকালীন সময় থেকে ঢাকার পান্থপথ থাকায় বিগত চারদলীয় জোটের সময় সন্ত্রাসীরা অফিসে হামলা করে অফিসটি ভাংচুর করে। বর্তমানে অফিসের অস্থায়ী কার্যক্রম চলছে টঙ্গীর দত্তপাড়ায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪ , ২০১৯
এইচএডি