১৯৮৭ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত সময়ে মৌলভীবাজারের গোমরা এলাকায় ১৪ দশমিক ৫৯ একর জায়গা নিয়ে বিসিক শিল্পনগরী বাস্তবায়ন করা হয়। রাস্তা, প্রশাসনিক ভবন এলাকা ও মসজিদ বাদে ১১ দশমিক ৫৯ একর জায়গায় ১০১টি প্লট তৈরি করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিল্পনগরীটির কাগজে কলমে ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনরত দেখানো হলেও বাস্তবে তা আরও কম। প্লট বরাদ্ধ দেওয়ার বছরের পর বছর পার হলেও এখনও উৎপাদনে আসতে পারছে না এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে পাঁচটি। এছাড়া শিল্পনগরীর পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কলকারখানার বর্জ্য-আবর্জনা। নেই কোনো ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেম। যেখানে সেখানে ফেলে রাখা হচ্ছে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিকর বর্জ্যও।
পুরো এলাকায় নেই যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা। বিসিকের শুরুতে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় করা হলেও ভুল নকশার কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না। ড্রেনের সামনের মুখ বন্ধ থাকায় পানি চলাচল করতে পারে না। শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত পানি জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশে। অনেকে উপায় না পেয়ে পাশের ফসলি জমিতে কেমিক্যাল মেশানো পানি ফেলছে। ফলে পরিবেশে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এ নিয়ে আশপাশের জমি মালিকদের কোনো আপত্তিই কাজে আসছে না। এছাড়া একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা তৈরি হয় বিসিক এলাকায়। ব্যাহত হয় উৎপাদন। অন্যদিকে, বিসিকের কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ছোট সীমানা প্রাচীর আর উন্মোক্ত দুই ফটক দিয়ে যখন তখন সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার রয়েছে। নিয়মে কলকারখানায় শ্রমিকরা বসবাস করতে পারেবন না বলা হলেও একাধিক কারখানায় তৈরি হয়েছে বাসস্থান। অবাদ চলাফেরার সুযোগ থাকায় রাতের আঁধারে বখাটে মাদকাসক্তদের আড্ডা বসছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিসিকের খানাখন্দ ও ভাঙা রাস্তা। মূল ফটকেই বিশাল বিশাল গর্তে জমে আছে পানি ও কাদা। বড় বড় গাড়ি পণ্য আনা-নেওয়াতে ভেতরে ঢুকতে পারছে না। রাস্তার পাশে যত্রতত্র মালামাল রাখার ফলে সমস্যায় রয়েছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া ভেতরের রাস্তায়ও খানাখন্দে ভরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এই শিল্পনগরীতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় একের পর এক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে মালিকানা পরিবর্তন করছে। এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে আটটিরও বেশি প্রতিষ্ঠান। সরকারের সুদৃষ্টি না থাকায় বিনিয়োগ করে বিপাকে আছেন ব্যবসায়ীরা।
বিসমিল্লাহ রাবার অ্যান্ড লেটেক্স ইন্ডাস্ট্রির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামীম হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শিল্পনগরী গড়ে ওঠার পরপরই আমরা এখানে প্রতিষ্ঠান করেছি। কিন্তু শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার এখন পর্যন্ত এর কোনো উন্নয়ন হয়নি। বিসিক কর্মকর্তাদের উদাসীনতায় বিসিকের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে। আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস চার্জ নিলেও বিসিক থেকে কোনো সার্ভিস পাচ্ছি না। রাস্তাঘাট, ড্রেন ও নিরাপত্তার সমস্যা তো আছেই।
বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ বাংলানিউজকে বলেন, এই শিল্পনগরীর নানা সমস্যা নিয়ে আমরা বিসিকের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ওয়েস্ট ম্যানেজম্যান্ট, রাস্তার উন্নয়ন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বিসিক কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বাসে রেখেছে। শুরু থেকে এখানে পরিকল্পনার ভুলে এসব সমস্যা তৈরি হয়েছে। কিন্তু দিনের পর দিন আমাদের সুবিধা বঞ্চিত করলে অনেকের মতো এখন অন্যান্যদেরও ব্যবসা ছেড়ে চলে যেতে হবে।
মৌলভীবাজার বিসিক শিল্পনগরী কর্মকর্তা শাহনেওয়াজ শাওন বাংলানিউজকে বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রকল্প আবেদন জমা দিয়েছি। আশা করছি শিগগির তা বাস্তবায়ন হবে। এছাড়া আমি এখানে নতুন জয়েন করেছি। এরইমধ্যে অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের মিটিংয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯
টিএ