নাটোরের মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে একটি মারামারির মামলায় সিংড়া উপজেলার আঁচলকোট গ্রামের দেবদাসের ছেলে বাবুকে দুই বছরের দণ্ডাদেশ দেন। কিন্তু তার পরিবর্তে কারাগারে পাঠানো হয় ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখ নামে একজন চা বিক্রেতাকে।
আদালতের নথিপত্র ও বাদীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৫ এপ্রিল সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে একটি মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কাজী আবদুল মালেক নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে বাবুসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় ১৮ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন।
তৎকালীন নাটোর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মমিনুল ইসলাম আসামি বাবুকে অভিযুক্ত করে একই বছরের ১৫ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। পরবর্তীতে একই বছরের ২৮ ডিসেম্বর পুনরায় বাবুকে অভিযুক্ত করে সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হেলেনা পারভীন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখিত আসামি বাবুকে গ্রেপ্তার না করে ইয়াকুব আলীর ছেলে বাবলু শেখকে ২০০২ সালের ৭ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। এ ভুলের বিষয়টি আদালতকে অবহিত না করে ছয় দিন পর ১৩ নভেম্বর আসামির আইনজীবী বাবু পরিচয়েই বাবলু শেখের জামিন করান।
পরে ওই পরিচয়েই বাবলু শেখের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামি পরীক্ষা করেন। যুক্তিতর্ক শেষে ২০১৬ সালের ২৩ জুন মুখ্য বিচারিক হাকিম মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকী আসামি বাবুকে দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই দিন কাঠগড়া থেকে বাবলু শেখকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনি ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট আপিলের মাধ্যমে জামিনে বের হন।
এদিকে মূল ঘটনা জানতে শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার গাঙ্গইল গ্রামে গেলে বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। মামলার বাদী কাজী আব্দুল মালেকের স্ত্রী ওলেগান বেগম বাংলানিউজকে জানান, তার স্বামী প্রায় ১৫ বছর আগে মারা গেছেন। তিনিসহ পরিবারের সবাই জানেন এ মামলার কার্যক্রম এতোদিনে স্থগিত হয়ে গেছে।
কাজী আব্দুল মালেকের ছেলে ও মামলার সাক্ষী বাতেন কাজীও একই কথা বলেন। তবে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে বাতেন কাজী আর কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
একই গ্রামের বাসিন্দা ও মামলার অপর সাক্ষী নবীউল্লাহ জানান, বাবু নামে কেউ এ এলাকায় নাই। তবে যে বাবলু শেখকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল এ মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অপরদিকে আঁচলকোট গ্রামে গেলে কথা হয় মকছেদ আলী প্রাং, জনাব আলী ও গ্রাম্য ডাক্তার বিশ্বনাথ সরকারের সঙ্গে। তারা
বাংলানিউজকে জানান, তাদের এলাকায় বাবু নামে কেউ কোনদিনই ছিলনা, বাবলু শেখ এলাকার একজন সহজ-সরল মানুষ। তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
বাবলু শেখ বাংলানিউজকে জানান, তার নাম বাবলু শেখ, বাবু নয়। অন্য আসামিদের সঙ্গে তিনি দিনের পর দিন আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় ভুল পরিচয়ের বিষয়টি জানার পর আইনজীবীর মাধ্যমে তার ভোটার পরিচয়পত্র আদালতে জমা দিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কিন্তু তাতেও সমাধান পাননি। তাই বিনা অপরাধে দুই বারে ৫৯ দিন কারাভোগ করেছেন।
বাবলু শেখের অন্যতম আইনজীবী দেওয়ান লুৎফর রহমান বাংলানিউজকে জানান, বাবলু শেখের জামিনের সময় অন্য আইনজীবী ছিলেন। তিনি দাবি করে বলেন, পরে আমি বাবলু শেখের জাতীয় পরিচয়পত্র আদালতে উপস্থাপন করে ত্রুটির বিষয়টি অবগত করেছি। এরপরও তার সাজা হওয়ার বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক।
বাবলু শেখের বর্তমান আইনজীবী শামীম উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, মামলার তদন্তকারী দু’জন কর্মকর্তা ও আগের আইনজীবীর গাফিলতির কারণে বিনা দোষে কারাভোগ করতে হয়েছে বাবলু শেখকে। তিনি পরবর্তী শুনানিতে খালাস পাবে বলে আশাবাদী।
নাটোর সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অনেক আগের বিষয়, না জেনে বলতে পারছি না। খোঁজ-খবর নিয়ে পরে বলতে পারব।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৯
এসএইচ