রোববার (১৩ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ আর্জি জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের মা সায়েরা খাতুন।
সংবাদ সম্মেলনে সম্রাটের মায়ের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেয়ে ফারহানা চৌধুরী শিরিন, সঙ্গে ছিলেন ছেলে রাশেদ আহমেদ চৌধুরী।
সম্রাটকে নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদ বলেন, তার উল্লেখ করার মতো কোনো সহায়-সম্পত্তি নেই। নিয়মিত সিঙ্গাপুর যেতেন চিকিৎসার জন্য। রাজনৈতিক কারণে ব্যক্তিগত আক্রোশে গ্রেফতার হয়েছেন সম্রাট।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের আগে বেশ কয়েকদিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। গ্রেফতার হওয়া পরে গণমাধ্যমে খবর শুনে বিষয়টা জেনেছি। দলের কাছে উন্নত চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু, কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাইনি।
এসময় সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান সম্রাটের ভাই রাশেদ আহমেদ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতারে ১০ দিন আগে থেকে অফিসে ছিলেন না সাবেক যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। অফিস ছিল অরক্ষিত। শরীর খারাপ থাকায় অন্য জায়গায় ছিলেন তিনি। তাই, অফিসে মদ, ইয়াবা, পিস্তল কিছুই ছিল না। এটি পরিকল্পিত সাজানো নাটক বলে দাবি করেন সম্রাটের স্বজনেরা।
লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে সায়েরা খাতুন বলেন, আপনি মমতাময়ী জননী, মানবতার মা। সম্রাট আপনার কর্মী, আপনার সন্তানতুল্য সংগঠনে অনুপ্রবেশকারী নয়। একজন মা হিসেবে আপনার কাছে আবেদন করছি, ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে সম্রাটকে মুক্ত করে দিন। তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিন। আমার সন্তানের জীবন রক্ষা করুন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতিক নির্যাতনে সম্রাট বহুবার আহত হন। এ কারণে ১৯৯৯ সালে দেবী শেঠির তত্ত্বাবধানে ওপেন হার্ট সার্জারির মাধ্যমে ভালভ প্রতিস্থাপন করেন তিনি। তখন থেকেই সম্রাট অসুস্থ শরীর নিয়ে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এ বছরের ১০ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে সম্রাটের ভালভ প্রতিস্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি থাকায় সেখানে যাওয়া হয়নি।
এসময় জানানো হয়, ঢাকা শহরে প্রতিটি ক্লাব পরিচালনার জন্য কমিটি রয়েছে। এগুলো প্রতিবছর ডাক দেওয়া হয়। সম্রাট কোনো ক্লাবের কমিটিতে ছিলেন না। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ও ব্যক্তিগত আক্রোশে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে জড়ানো হচ্ছে।
সম্রাটের পরিবারের দাবি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে তার ছয় মাসের সাজা হয়েছে। এ মামলার আদেশ তারা এখনো পাননি। এছাড়া, ক্যাঙ্গারু বাংলাদেশি বন্যপ্রাণী নয়। যেহেতু, এটা দেশে শিকার হয়নি, তাই এটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের মধ্যে পড়ে না। ওই ক্যাঙ্গারুর চামড়াটি এক প্রবাসী তাকে উপহার দিয়েছেন। তাই, এটি সাজার আওতায় পড়বে না।
সম্প্রতি ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত হয়ে ওঠার পর গত ৫ অক্টোবর রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে অভিযান চালিয়ে সম্রাট ও তার সহযোগী আরমানকে আটক করে র্যাব। পরে তাদের সঙ্গে নিয়ে ৬ অক্টোবর রাজধানীতে দু’জনের বাড়ি-অফিসে দিনভর অভিযান চালানো হয়। কাকরাইলের অফিসে বন্যপ্রাণীর চামড়া সংরক্ষণের দায়ে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরপর তাকে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
বুকে ব্যথা অনুভব করলে গত বুধবার (৮ অক্টোবর) কারাগার থেকে প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে, পরে ঢামেক চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে এনআইসিভিডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সাবেক যুবলীগ নেতাকে। সেখানে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সম্রাটকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৯
পিএস/একে