ঢাকা, সোমবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

পুঁজিবাদী এ রাষ্ট্র মানুষের পক্ষে নয়: সিরাজুল ইসলাম 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
পুঁজিবাদী এ রাষ্ট্র মানুষের পক্ষে নয়: সিরাজুল ইসলাম 

ঢাকা: বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বাস্তবতার সমালোচনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যামিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, পুঁজিবাদী এই রাষ্ট্র মানুষের অধিকার দেখছে না। এ রাষ্ট্র মানুষের পক্ষে নয়, বরং শত্রুতে পরিণত হয়েছে। 

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে সম্প্রতি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ফেনী নদীর পানি চুক্তি ঘিরে ‘ভারত-বাংলাদেশ পানি বিতর্ক' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন এ অধ্যাপক। ভাসানী অনুসারি পরিষদ এ সেমিনারের আয়োজন করে।

 

সিরাজুল ইসলাম বলেন, আজকে পানি নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং নজরুল ইসলাম অনেক আগেই তাদের লেখার মাধ্যমে বলে গিয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলাম রাজনৈতিক কারণে এ সমস্যা আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। নদীতে বাধের প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, এই বাধটা তৈরি হয়েছে দানব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে, এই বাধের ফলে মানুষ, প্রকৃতি, পশুপাখি সবকিছুই বিপন্ন হচ্ছে।  

‘পানির জাতীয় সমস্যা সমাধানে মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। এর সমাধানের পথ মাওলানা ভাসানী দেখিয়ে গিয়েছেন আমাদের। মাওলানা ভাসানী ছিলেন পরিপূর্ণ একজন জাতীয়তাবাদী চেতনার মানুষ। তিনি নজরুল ইসলামের মতোই পরিপূর্ণ একজন বাঙালি ছিলেন, ভদ্রলোকের বাঙালি নয়। তিনি সাধারণ মানুষের মুক্তি ও সংগ্রামের কথা বলতেন। বর্তমান সরকার জনগণের জন্য কী করছেন তাতো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। সুতরাং আমাদের সমস্যা আমাদেরকেই সমাধান করতে হবে মাওলানা ভাসানীর দেখানো পথ অনুসরণ করে। সেই কারণে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। দেশের প্রতি আবেগের পরিধি বাড়াতে হবে। ’  

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে প্রবীণ এ অধ্যাপক বলেন, বর্তমান সময়ে মিডিয়ার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে পারে। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেক দৈনিক পত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল আছে, কিন্তু পানির সমস্যা বিষয়ে তেমনভাবে কোনো খবর প্রকাশিত হচ্ছে না। ১৯৭১ সালেও সাংবাদিকরা একতাবদ্ধ ছিল। তাই সাংবাদিকদের একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, জনগণের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরতে হবে।  

‘শুধু ফেনী নদী নয়, আমাদের সমুদ্রের পানি বেড়ে যাচ্ছে জলবায়ুগত কারণে। বাংলাদেশের একটা অংশ সমুদ্রগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ সকল সমস্যায তৈরি হচ্ছে পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে। আমরা দেখলাম বাংলাদেশ সমুদ্র সীমা জয় করেছে। তখন মিয়ানমার কোনো কথা না বলে, একেবারে চুপ করে ছিল। এর পরবর্তীতে আমরা দেখতে পেলাম মিয়ানমার কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিলো, এবং বুঝিয়ে দিলো কার ক্ষমতা বেশি। ’ 

বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মুক্তির কথা উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সমস্ত সমস্যাই এই রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে। আমরা যদি পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তন না করতে পারি, তাহলে আমাদের সেই মুক্তি আসবে না, যে মুক্তির জন্য আমরা দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ করেছি। যে মুক্তির জন্য মাওলানা ভাসানী আজীবন সংগ্রাম করেছেন।
  
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন- ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনা করেন-  জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল।

আলোচনায় অংশ নেন- পানি বিশেষজ্ঞ ম. এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু প্রমুখ।  

সেমিনারে ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন ৫৪ নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা দাবিতে আলোচনা তুলে ধরেন বক্তারা।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৯
আরকেআর/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।