ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

জাতীয়

আমবাগানে পাখির বাসা রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
আমবাগানে পাখির বাসা রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন আমবাগানে বাসা বেঁধেছে পাখির দল

রাজশাহী: অবশেষে আমবাগানে থাকা পাখির বাসা রক্ষায় ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বিষয়টি জানাজানির পর বুধবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে গিয়ে সেই আমবাগানটি পরিদর্শন করে। এ সময় জেলা প্রশাসন ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দলটি আমবাগানের ইজারাদার, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন। এ সময় জানানো হয় কোনোভাবেই আমবাগানে থাকা পাখির বাসা নষ্ট করতে দেওয়া যাবে না।

প্রয়োজনে এর ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।

এক প্রশ্নের জবাবে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। নির্দেশনা এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই বিষয়টি তাদের নজরে আসার পর বুধবার দুপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রতিনিধিদল ওই আমবাগান পরিদর্শন করেছে।

আমবাগানের গাছে বাঁধা শামুকখোল পাখির বাসা রক্ষায় তারা সেখানে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আরও আলাপ আলোচনা করা হবে। এ সময় পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সেখানে ছিলেন।

এদিকে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগান নিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন- কখনোই পাখির বাসা ভাঙা যাবে না।

গ্রামের আমবাগানে কয়েক হাজার শামুকখোল পাখিকে ১৫ দিনের মধ্যে তাড়িয়ে দেওয়া সংক্রান্ত এক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর আদালত এ মন্তব্য করেন।

একটি জাতীয় দৈনিকে ‘পাখিদের বাসা ছাড়তে সময় দেওয়া হলো ১৫ দিন’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারুমিতা রায়।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে আদেশ দেন।

খোর্দ্দ বাউসা গ্রামকে কেন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি অভয়ারণ্য ঘোষণা করলে ওই আম বাগান ইজারাদারদের কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা ৪০ দিনের মধ্যে জানাতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
 
‘পাখিদের বাসা ছাড়তে সময় দেওয়া হলো ১৫ দিন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাখিদের বাসা ছাড়ার সময় দেওয়া হয়েছে ১৫ দিন। এর মধ্যে পাখিরা বাসা না ছাড়লে তাদের বাসা থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি তাদের বাসা ভেঙেও দেওয়া হবে। এ ঘোষণা শুনে কেউ হয়তো রসিকতা মনে করতে পারে কিন্তু এটাই বাস্তব। ঘটনাটি ঘটেছে বাঘার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে। কয়েক হাজার শামুকখোল পাখি এই হুমকির মুখে পড়েছে।

আমবাগানে বাসা বেঁধেছে পাখির দলরাজশাহীর আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান। তার ইজারা নেওয়া আম বাগানের গাছে গাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চারা এখনো উড়তে শেখেনি। কিন্তু বাগান মালিক এখন বাগানের পরিচর্যা করতে চান। পাখিপ্রেমীদের প্রতিরোধের মুখে তিনি মঙ্গলবার থেকে পাখিদের জন্য ১৫ দিন সময় বাড়িয়েছেন।

আতাউর রহমানের বাড়ি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর গ্রামে। তিনি ৭ লাখ টাকা দিয়ে তিনি এই বাগান দুই বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন। গত বছর পাখি থাকার কারণে তার আম নষ্ট হয়েছে। এবার আর তিনি তা হতে দেবেন না। এখনই তিনি আমগাছ পরিচর্যা করতে চান। এজন্য পাখির বাসা ভেঙে গাছে ওষুধ ছিটাতে চান।
 
স্থানীয় পাখিপ্রেমী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। সব বাসাতেই বাচ্চা রয়েছে। বাচ্চাগুলো উড়তে শিখতে অন্তত আরও এক মাস সময় লাগবে। এর আগে বন অধিদপ্তর থেকে এই আমগাছের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে বন অধিদপ্তরের আর কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাখিগুলোর বাসা ভেঙে দিলে হাজার হাজার পাখির বাচ্চা মারা পড়বে। এরই মধ্যে বাসা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন ১০০ পাখির বাচ্চা ধরে নিয়ে গেছে। আজ তিনিসহ কয়েকজন গিয়ে আতাউর রহমানের কাছে আপত্তি জানান। পরে তিনি ১৫ দিন সময় দেন।

খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের ২৫টি আমগাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে। গত চার বছর ধরে এরা এই বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়।
 
বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে এই বাগানের পাশেই সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে আইন অনুযায়ী যেকোনো বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার, পরিবহন ও ক্রয়-বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ, যার সর্বোচ্চ শাস্তি ১২ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫ লাখ টাকা জরিমানা। এর নিচে বন্যপ্রাণী বিষয়ক যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগের একটি নম্বর দেওয়া আছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
এসএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।