ঢাকা, রবিবার, ৫ মাঘ ১৪৩১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

নদী ভাঙন থেকে রক্ষা চায় বরিশালবাসী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৯
নদী ভাঙন থেকে রক্ষা চায় বরিশালবাসী

বরিশাল: বর্ষা মৌসুমের শেষে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে বরিশালে বেশকিছু জায়গায়। অব্যাহত নদী ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের মনে। 

সোমবার (২৮ অক্টোবর) উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের লস্করপুরে একটি বাজারে ইতোমধ্যে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বাজারের সাতটি দোকান। এছাড়া বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।

তবে কালাবদর ও তেঁতুলিয়া নদীর তীরে অবস্থিত শ্রীপুর ইউনিয়ন সব চেয়ে বেশি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। পাশাপাশি অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছে এ ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ। নদী বেষ্টিত এ ইউনিয়নের মানুষকে গত কয়েক বছর ধরে নদী ভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। অনেকেই ভিটে-মাটি সব হারিয়ে ছেড়েছেন এলাকা।  

নদী ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে সম্প্রতি শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লোকমান হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন।  

এর আগে ২০১৮ সালে বাহেরচর শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নদী ভাঙন রোধ ও বিদ্যালয় ভবনকে রক্ষার দাবি জানিয়ে চিঠি লিখেছে। তবে দ্বিধার কারণে নুসরাতের বাবা চিঠিটি পাঠাতে না পারলেও সেটির ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করেছেন।  

নদী ভাঙন রোধের দাবিতে ওই ইউনিয়নের মানুষ প্রায়ই মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। জনপ্রতিনিধিসহ অনেকেই গিয়ে সেখানে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করলেও বাস্তবে নদী ভাঙন যেন পিছু ছাড়ছে না ইউনিয়নবাসীকে। তবে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ওই এলাকা পরিদর্শন শেষে নদী শাসন ও নাব্যতা ঠিক রাখতে ড্রেজিং দিয়ে নদী খননের কাজ চলতে দেখা গেছে শ্রীপুর সংলগ্ন নদীতে।

 কিন্তু মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট বন্দর সংলগ্ন নদীতে বাঁধ নির্মাণের পর এ অঞ্চলে ভাঙন তীব্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।

শ্রীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী লোকমান বাংলানিউজকে জানান, নদী ভাঙনের ফলে ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচশ’ ঘরবাড়ি, শ্রীপুর বাজার, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দু’টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মহিলা মাদ্রাসা, একটি কওমি মাদ্রাসা, একটি দাখিল মাদ্রাসা, হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমিসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে।

তিনি জানান, প্রায় তিন হাজার মানুষ নদী ভাঙনের কারণে গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গত তিন বছর ধরেই ভাঙছে শ্রীপুর সংলগ্ন তেঁতুলিয়া নদী। এ নদী ভাঙন বর্তমানে পূর্বের থেকে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে।  

জরুরি ভিত্তিতে এ ভাঙন প্রতিরোধ করতে না পারলে এ ইউনিয়নের পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, শ্রীপুর ইউনিয়নকে চলমান নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছেন উপজেলার নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান এ কে এম মাহফুজুল আলম লিটন।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সফি উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এ ইউনিয়নকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে প্রকল্প গ্রহণ করে তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হয়ে এলেই কাজ শুরু হবে।

এদিকে, গত সোমবার (২৮ অক্টোবর)  বিকেলে আকস্মিক সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে উজিরপুর উপজেলার বড়াকোঠা ইউনিয়নের লস্করপুর বাজারের সাতটি দোকান, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পল্টুনসহ মূল্যবান মালামাল।  

স্থানীয়রা জানান, কিছু বুঝে উঠার আগেই লস্করপুর বাজারের রফিক সরদারের পাকা দোকান, তুহীন হাওলাদারের চায়ের দোকান, মিজান হাওলাদার, আফজাল হাওলাদার, ইসমাইল খলিফা, জামাল হাওলাদার, করিম হাওলাদার, শাহে আলমের মালামালসহ মুদি দোকান মুহূর্তের মধ্যেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।  এ সময় ঘাটে বাঁধা সুমন খলিফার দু’টি ট্রলার ডুবে যায় এবং বিআইডব্লিউটিএ’র পল্টুনটি তাৎক্ষণিকভাবে তলিয়ে যায়। এছাড়া বাজার সংলগ্ন সিদ্দিক সরদারের পুকুরের ৫০ হাজারের বেশি টাকার মাছ নদীতে ভেসে যায়।  

এর আগেও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে লস্করপুর গ্রামের অসংখ্য বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। সন্ধ্যা নদীর ভাঙনে আশোয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টার, কমলাপুর, শিকারপুর বন্দর, দাসেরহাট, হানুয়া, চথলবাড়ি, মালিকান্দা, মীরেরহাটসহ দু’শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর, পানের বরজ, মাছের ঘের নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে।     

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৯
এমএস/এবি/আরআইএস/


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।