চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নূরনগর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র। নদীর বুকচিরে গড়ে ওঠেছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কয়েকটি সুউচ্চ ভবন।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, জায়গাটি দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে স্থানীয় জনগণের কাছ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দাবি, দখলকারিরা যে বর্ণেরই হোক না কেন, এ বিষয়ে তাদের অবস্থান শক্ত। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদীর মূল স্রোতধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নদীগুলো খনন করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ মেলে ৩৭ কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে নবগঙ্গা নদী খনন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে খনন নির্ধারণ করা হবে ১৪ কিলোমিটার। এর ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮ কোটি টাকা। চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় নবগঙ্গা নদী খননের।
চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, শহরের ইসলামপাড়ার শ্মশান মোড় থেকে নবগঙ্গা নদীটি খনন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতোমধ্যে নদীটি খনন শেষ হয়েছে ৩০ শতাংশ। কিন্তু চুয়াডাঙ্গা-ঝিনাইদাহ সড়কের নূরনগর গ্রামে নদীটির খননকালে থমকে গেছে কাজ। কারণ নদীর মধ্যবর্তী স্থানের দুই একর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অবহিত করা হয়েছে মন্ত্রণালয়কে। তিনি আরও জানান, নদীর মূল স্রোতধারা অব্যাহত রাখতে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে নদী খনন কাজ কোনোভাবেই থেমে থাকবে না।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের জন্য মন্ত্রণালয় জায়গা খোঁজ করলে নূরনগর গ্রামের এ জায়গাটি নির্ধারণ করা হয়। পরে চুয়াডাঙ্গার তৎকালীন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় ১১ জনের কাছ থেকে দুই একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এজন্য অধিদপ্তরকে গুণতে হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এছাড়া অধিদপ্তরের একটি প্রশাসনিক ভবন, একটি প্রশিক্ষণ ভবন, একটি অফিসার ও একটি স্টাফ কোয়ার্টার, ছেলে-মেয়েদের জন্য দু’টি হোস্টেল এবং দু’টি শেড তৈরির নির্মাণ খরচ হয় ২০ কোটি টাকা।
২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট এ প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার। এরপর নির্মাণ কাজ শেষ হলে ভবনটি ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
চুয়াডাঙ্গা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুম আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, গত কয়েকদিন আগে তারা জানতে পেরেছেন যে, অধিগ্রহণ করা জায়গাটি নবগঙ্গা নদীর। বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত। গোটা বিষয়টি উল্লেখ করে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের কাছে বিক্রি করা ১১ ব্যক্তি জমি তাদের বলেই দাবি করছেন। এদের মধ্যে সালাউদ্দীন মো. মর্তুজা নামে একজন বলেন, এসব তাদের পৈতৃক সম্পত্তি। বিভিন্ন রেকর্ড, দলিলপত্রও তাদের নামে। সব কাগজপত্র পরীক্ষা করেই যুব উন্নয়নের কাছে জমি বিক্রি করা হয়েছে।
আক্তারুজ্জামান মজনু নামে অপর একজন জানান, বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। এ বিষয়ে খুব শিগগিরই তারা আদালতের শরণাপন্ন হবেন।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার বাংলানিউজকে জানান, নদী দখলকারিদের পরিচয় দখলকারিই। তাদের অন্য কোনো পরিচয় থাকতে পারে না। দখলকারিরা সরকারি-বেসরকারি অথবা ব্যক্তি পর্যায়ের যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে তা অব্যাহত রাখতে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
আরবি/