বরিশাল: বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও হামলায় একজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। হামলা করে প্রতিপক্ষের ১০-১২টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সাবেক উলানিয়া ইউনিয়ন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়া নামে পৃথক দুটি ইউনিয়ন করা হয়। ইউনিয়ন বিভক্তির বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নিষ্পপ্তি না হওয়া পর্যন্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন স্থগিত রেখেছে নির্বাচন কমিশন।
২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণার পর থেকে স্থানীয় কয়েকটি পক্ষের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (১০ এপ্রিল) ভোর ৪টার দিকে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়ার সুলতানী গ্রামে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লিটন জানান, আনুমানিক রাত ৪টার দিকে কয়েকশ’ লোক একত্রিত হয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পূর সুলাতানী ও সুলতানী গ্রামে হামলা চালায়।
তিনি জানান, হামলাকারীরা ওই এলাকার দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। এলাকার বাসিন্দারা আত্মরক্ষার্থে প্রতিরোধ করতে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। ঘটনার খবর পেয়ে আশপাশের গ্রামের লোকজন সুলতানী গ্রামে আসেন। এ সময় হামলাকারীদের আঘাতে পার্শবর্তী আশা গ্রামের বাসিন্দা সাইফুল সর্দার (৩০) নিহত হন এবং কমপক্ষে ১০-১২ জন আহত হন। হামলাকারীরা উলানিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও জানান, সম্প্রতি স্থগিত হওয়া উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া হামলাকারীরা চেয়ারম্যান প্রার্থী মিলন চৌধুরীর লোক বলে দাবি করেছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। নিহত সাইফুল সর্দার আশা গ্রামের আ. জব্বার সর্দারের ছেলে ও দক্ষিণ উলানিয়ার চেয়ারম্যান প্রার্থী রুমা বেগমের সমর্থক বলে জানান তিনি।
তবে সাইফুলের স্ত্রী খাদিজা বেগম জানান, উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারেক সরদার গংদের সঙ্গে মিলন চৌধুরী, মিজান মোল্লা, নোমান মোল্লা গংদের দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে একাধিক হামলা-মামলার ঘটনা ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার দিবাগত গভীর রাতেও কালীগঞ্জ বাজার ও আশপাশের এলাকার বাড়িঘরে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ সময় হামলাকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাইফুল ইসলাম নিহত হন এবং হাবু সরদার জহিরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। এ সময় কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় অহিদ ও হাসান আলী নামের দুই জনকে আটক করেন স্থানীয়রা।
এ ব্যাপারে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম জানান, ভোর ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার দিকে উলানিয়ার কালিগঞ্জ ব্রিজের পাশে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে একজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কয়েকটি বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুই দিন আগে উত্তর উলানিয়াতেও নির্বাচন নিয়ে হামলা-সংঘর্ষ হয় এবং এর আগে ৪ ডিসেম্বর ও ১৩ মার্চ দক্ষিণ উলানিয়ার প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিলো।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
এমএস/এমজেএফ