ভোলা: ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আসলামপুর গ্রামে হত্যার পর মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার ঘটনার জট খুলতে শুরু করেছে। সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুটি মাথা উদ্ধারের পর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে চাঞ্চল্যকর সেই লোমহর্ষক হত্যার রহস্য।
পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া মাথা দুটি দুলাল (৫০) ও তপন (৫৫) নামে দুই সহোদরের। তারা চরফ্যাশন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত উপেন্দ্র চন্দ্র সরকারের ছেলে। তিন বছর আগে থেকে তারা ভারতে বসবাস করে আসছিলেন।
জমি বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে আসামিরা। একইসঙ্গে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত অন্য আসামিদেরও খুঁজছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ প্রাথমিকভাবে বৃহস্পতিবার রাতে (২২ এপ্রিল) ৭ জনকে আটক করলেও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বেলাল, কাসেম ও আবু মাঝি নামে তিন জনকে গ্রেফতার দেখায়। শুক্রবার তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার তিন জন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরো আসামি জড়িত থাকতে পারে বলেও সন্দেহ করছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে তাদের তথ্য প্রকাশ করছে না পুলিশ। শুক্রবার ১৬৪ ধারায় গ্রেফতার তিন জনের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানিয়েছেন, জমি বিক্রির টাকা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে এ ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। তিন বছর আগে তপন ও দুলাল দুই ভাই আসলামপুর ইউনিয়নের বেল্লাল ও কাসেমের কাছে ১৫ লাখ টাকায় জমি বিক্রি করেন। কিন্তু অগ্রিম তিন লাখ টাকা দেওয়া হলেও বাকি ১২ লাখ টাকা জমি রেজিস্ট্রির পর দেওয়া হবে বলে জানানো হয় দুই ভাইকে। এরপর তপন-দুলাল ভারতে চলে যান। একপর্যায়ে জমি রেজিস্ট্রি ও জমি বিক্রির বাকি টাকা নিতে ভারত থেকে তারা দুই ভাই বাংলাদেশে আসেন। গত বছর জমি রেজিস্ট্রি হলেও বাকি ১২ লাখ টাকা দেয়নি আসামিরা। তারা টাকা নিয়ে নানা রকম টালবাহানা শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে দুলাল ও তপনের আরেক ভাইকে দিয়ে চরফ্যাশনে ‘অগ্রক্রয়’ মামলা দায়ের করা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন আসামিরা। জমি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে নানা কৌশল খুঁজতে থাকেন তারা। পরে টাকা ফেরত দেবে বলে তাদের ডেকে নিয়ে খুন করেন আসামিরা।
এদিকে রাতে গ্রেফতার হওয়া আসামিদের দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে শুক্রবার পুলিশ ঘটনাস্থল সুন্দরীখাল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুটি উদ্ধার করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে জনৈক মহিবুল্লাহ বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে দুটি মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত ৮ এপ্রিল আসলামপুর ৬ নম্বর ওয়ার্ডে একটি বাগান থেকে দগ্ধ দুটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় চরফ্যাশন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু উদ্ধার হওয়া মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি কেউ। ২২ এপ্রিল মাথা দুটি উদ্ধারের পর তাদের শনাক্ত করা হলো।
যেভাবে হত্যা করা হয় দুই ভাইকে: আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, জমি বিক্রির টাকা দেওয়ার কথা বলে দুই ভাই দুলাল (৫০) ও তপনকে (৫৫) ডেকে নিয়ে যায় আসামিরা। গত ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শ্বাসরোধ করে দুলাল ও তপনকে হত্যা করা হয়। তাদের যাতে কেউ চিনতে না পারে সেজন্য গভীর রাতে পেট্রোল ঢেলে মরদেহ দুটি পুড়িয়ে ফেলা হয়। এরপর রাতেই শরীর থেকে তাদের মাথা আলাদা করে সুন্দরী খালে ফেলে দেয় খুনিরা। ৮ এপ্রিল পুলিশ যখন ঘটনাস্থলের পাশে নিহতদের মাথার খোঁজ করছিলো তখন রাতের আঁধারে খুনিরা খাল থেকে মাথা উঠিয়ে জনৈক মহিবুল্লাহ বাড়ির বাথরুমের সেপটিক ট্যাঙ্কে লুকিয়ে রাখে।
হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সুন্দরী খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার আরো জানিয়েছেন, উদ্ধার হওয়ায় দুটি মাথার সঙ্গে দগ্ধ দুই মরদেহের মিল রয়েছে কিনা তা আরো গভীরভাবে নিশ্চিত হতে পুলিশ তাদের ডিএনও সংগ্রহ করেছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে খুনের বিষয়ে যেসব তথ্য দিয়েছে, খুনের মোটিভ ঠিক সেটিই ছিলো কিনা, এসব তথ্য উদঘাটনে পুলিশের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। চাঞ্চল্যকর হত্যার জট খুলতে শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।
গত ৮ এপ্রিল উপজেলার আসমালাপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে মস্ককবিহীন দগ্ধ দুটি মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর চরফ্যাশন থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২১
আরএ