ঢাকা, শনিবার, ০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইয়াসের তাণ্ডবে পটুয়াখালীতে নারীর মৃত্যু, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৯ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
ইয়াসের তাণ্ডবে পটুয়াখালীতে নারীর মৃত্যু, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

পটুয়াখালী: ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে। মাত্রাতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ডুবে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার (২৭ মে) দুপুরে দুমকী উপজেলার সন্তোষদি চর এলাকার হাফেজ হাওলাদারের স্ত্রী মৃত হাসিনা (৫৫) তার বাড়ির পাশের লোহালিয়া নদীর পারে হোগলাপাতা কাটতে যান। আধাঘণ্টা পর স্থানীয় লোকজন তাকে পানিতে ভাসতে দেখে হাসিনাকে উদ্ধার করে দুমকী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এবারের ঘূর্ণিঝড়ে জেলায় মোট ২৩২টি গ্রাম, সাত হাজারের বেশি মাছের ঘের ও পুকুর প্লাবিত এবং প্রাণ হারিয়েছেন একজন। বিধস্ত হয়েছে সাড়ে চার হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি। এতে জেলার আটটি উপজেলার ৭৬টি ইউনিয়নের মোট পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬৩ জনকে দুর্গত এলাকার মানুষ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ৪৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, হাজার হাজার একর জমির ফসল, গবাদিপশু নিখোঁজ ও হাঁস মুরগিসহ গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৭ মে) বিকেলে জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরীর স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গতদের জন্য খাদ্য, পুর্নবাসনের জন্য টিনসহ অন্য ত্রাণ সামগ্রীর জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করছেন প্রশাসন।

ইতোপূর্বে উচ্চ জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত পটুয়াখালী জেলা ৭৬টি ইউনিয়নের প্রতিটিতেই আড়াই লাখ টাকা করে বরাদ্দ করেছে সরকার। করোনা ভাইরাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্তের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী মানবিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে দুর্গত এলাকার মানুষের জোয়ারের সময় বেড়িবাঁধে ও আশ্রয় কেন্দ্রে শুয়ে বসে দিন কাটছেন অনেকের। ভাটার সময় ঘরে ফিরলেও চুলা জ্বালানোর কোনো উপক্রম নেই। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার খেয়ে দিন পার করছেন তারা। নিজেদের পুর্নবাসন ও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তৎপর দেখা গেছে অনেকেই।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, পর্যটন এলাকার শুটকি পল্লি, আচার ও চকলেট এবং ঝিনুকের শতাধিক দোকান বিলীন হয়ে গেছে এবং ৫০টি দোকান ও ১০টির বেশি হোটেল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বেড়িবাধ ভেঙে দুইশতাধিক পরিবার ও একাধিক মাছের ঘের ও পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পটুয়াখালী অঞ্চলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৗশলী মো. হালিম সালেহী বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। জেলায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ পুণনির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বাংলানিউজকে জানান, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এবার বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে কিংবা বাঁধ উপচে পানি ঢুকে অনেক এলাকার মাছের ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। উচ্চ জোয়ারের পানিতে ৭০৮৫টি মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মাছ, পোনাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নিয়ে ৫৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে সহায়তা করার জন্য সকলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন প্রতি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং অনেক এলাকায় খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২১
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।