সিলেট: ভূমিকম্পে সিলেট নগরের একটি স্কুল ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। সোমবার (৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা ২৯ ও ৬টা ৩০ মিনিটে দুই দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া না গেলেও পরে জানা গেছে, নগরের বন্দরবাজার এলাকায় প্রাচীনতম রাজা গিরিশচন্দ্র (জিসি) স্কুলের বদরউদ্দিন কামরান ভবনে ফাটল দেখা দেয়।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মুমিত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভূমিকম্পে বিদ্যালয় ভবন ফটলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারাও স্কুল ভবন পরিদর্শন করেন।
রিখটার স্কেলে ৩ দশমিক ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রাজা জিসি উচ্চ বিদ্যালয় ১৮৮৬ সালে নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই ভবনের বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। দেয়ালের কিছু কিছু স্থানে আস্তরণ খসে পড়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। ভবন কিছুটা হেলেও পড়েছে।
রাজা জিসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল মুমিত বলেন, ভূমিকম্পে বিদ্যালয় বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার পাশাপাশি কিছুটা হেলেও পড়েছে।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের সিনিয়র মেট্রোলজিস্ট মুমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ভূমিকম্প শুধু সিলেট অঞ্চলে অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে দু’টি ঝাঁকুনিরই মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৮। এটির উৎপত্তিস্থল সিলেটেই। ঢাকা থেকে ১৮৮ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে।
এদিকে, ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার কারণে লোকজন বাসা-বাড়ি ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। অনেকে খোলা স্থানে ও সড়কের মাঝখানে নিরাপদ দূরত্ব বুঝে অবস্থান নিতে থাকেন।
এছাড়া বহুতল ভবনে অনেককে ছাদে উঠে অবস্থান করতে দেখা গেছে। অজানা আতঙ্কে অনেকে শিশু সন্তানদের নিয়ে ঘরে ফিরতেও ভয় পাচ্ছেন।
এর আগে গত ২৯ মে পরপর চারবার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। হেলে পড়ে অনেক ভবন। ২৯ মে সকাল ১০টা ৩৬ মিনিট, ১০টা ৫০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড, ১১টা ২৯ মিনিট ৫৩ সেকেন্ড ও দুপুর ২টায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ওই সময় ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মেট্রোলজিস্ট মমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে ভূমিকম্পের রিখটার স্কেল ছিল ৩ দশমিক শূন্য। দ্বিতীয় ঝাঁকুনি ১০টা ৫০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে রিখটার স্কেলের মাত্রা ছিল ৪ দশমিক ১। তৃতীয় ঝাঁকুনি ১১টা ২৯ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ২ দশমিক ৮। এছাড়া দুপুর ২টায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়। চারটিরই উৎপত্তিস্থল সিলেটের আশপাশে। ঢাকা থেকে উত্তর পূর্বে এর অবস্থান।
তিনি বলেন, ডাউকি ফল্টের কারণে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যে কারণে জৈন্তাপুর সীমান্তের দিকেই এর উৎপত্তিস্থল।
ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সিলেটে পর পর চারবার ভূমিকম্প হয়েছে। ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ সিসমিক জরিপে সকাল ১০টা ৫০ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডে ৪ দশমিক ১ মাত্রায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। বাকি তিনটি হালকা কম্পন অনুভূত হয়। চারটিরই উৎপত্তিস্থল সিলেটের কাছাকাছি। ঢাকা থেকে এর উৎপত্তিস্থলের দূরত্ব ১৯৬ কিলোমিটার উত্তরপূর্বে।
পরদিন রোববার (৩০ মে) ভোর ৪টা ৩৬ মিনিটে আবারো ভূমিকম্প অনুভুত হয়। ভোর বেলায় হওয়া ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮। এটিরও উৎপত্তি স্থল সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্ত এলাকায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২১
এনইউ/আরএ