ঢাকা, সোমবার, ৫ কার্তিক ১৪৩১, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে মাঠে নেমেছে পুলিশ

শেখ জাহাঙ্গীর আলম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৬ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে মাঠে নেমেছে পুলিশ

ঢাকা: রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়ক ও অলিগলিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। তিন চাকার প্যাডেল রিকশার কাঠামোতে ব্যাটারির সাহায্যে মোটর যুক্ত করে অটোমেশন সিস্টেম অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা।

মোটরযান বা প্যাডেল চালিত যানের কোনো ক্যাটাগরিতে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। তবুও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ কর্মকর্তার সহায়তায় দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে এই বাহনটি অবৈধভাবেই (কোনো লাইসেন্স বা কাগজপত্র নেই) সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করে আসছে। ওজন ও গতির সঙ্গেও কোনো সামঞ্জস্য না থাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা কেন্দ্রিক দুর্ঘটনাসহ প্রাণহানির ঘটনাও প্রতিনিয়ত ঘটছে।

যদিও বিভিন্ন সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এই বাহনটির বিরুদ্ধে কিছু পদক্ষেপ নিলেও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবের কারণে তা পুরোপুরি বন্ধ করতে পারেনি।  

এদিকে দিনের পরদিন ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা বাড়তে থাকলেও গেল বছরগুলো প্রশাসনও নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করে আসছিলো। তবে দেশে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা যখন বেড়েই চলেছে এবং দুর্ঘটনাও বাড়ছে, ঠিক তখন সড়কে এই বাহনটির চলাচল বন্ধ করতে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।  

সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধে একটি নির্দেশনা জারি করেছে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর ফলে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলাগুলোতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে।

ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধে নির্দেশনা:

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা (সিনিয়র তথ্য অফিসার) মো. শরীফ মাহমুদ অপু বাংলানিউজকে বলেন, গত ২০ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন সেক্টর শৃঙ্খলা জোরদার এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যেসব প্যাডেল চালিত রিকশা ও ভ্যানে ব্যাটারি এবং মোটর লাগানো হয়েছে শুধুমাত্র সেসব রিকশা ও ভ্যান থেকে ব্যাটারি/মোটর খুলে ফেলার একটি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সিদ্ধান্তটি সংশ্লিষ্ট সবখানে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।  

পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা সম্পূর্ণ একটি অবৈধ যান। কারণ এর কোনো বৈধ লাইসেন্স বা কাগজপত্র নেই। একদিকে এটি থ্রি-হুইলার অপরদিকে প্যাডেলের পরিবর্তে ব্যাটারিযুক্ত মোটর লাগানো হয়েছে। এ কারণে এই বাহনটি যানবাহন ও পরিবহন আইনের কোনো ক্যাটাগরিতে পড়ে না।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, প্যাডেল রিকশার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি লাইসেন্স নম্বর দিয়ে থাকে। এজন্য ওই রিকশার মালিককে ছয়শত টাকা ফি জমা দিতে হয়। এ লাইসেন্স নেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় কাউন্সিলরের সুপারিশ প্রয়োজন হয়। কিন্তু ব্যাটারিচালিত রিকশায় মোটর যুক্ত করলেও তা সিটি করপোরেশনের যানবাহন আইন এবং পরিবহন আইনের কোনোটিতে পড়ে না। তাই এ বাহনটি সম্পূর্ণ অবৈধ হিসেবে গন্য করা হয়েছে।

অটোরিকশা চালকরা কি বলছেন:

ব্যাটারিচালিত রিকশা চালকরা বলছেন, দেশে লাখ লাখ অটোরিকশা চলছে। এ বাহনের ওপর নির্ভর করে এক একটি পরিবার। আমরা অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছি। কোনো চুরি তো করছি না। এখন যদি সরকার এই রিকশা বন্ধ করে দেয় তাহলে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাবে। লাখ লাখ পরিবার অসহায় হয়ে পড়বে। তখন আমরা কোথায় যাবো, কি করে খাবো, কারা আমাদের কাজ দেবে?

আব্দল্লাহপুর থেকে ফায়দাবাদ হয়ে মইনারটেক পর্যন্ত ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান সিদ্দিকুর রহমান। তিনি গত দুইদিন ধরে ফায়দাবাদ পর্যন্তই তার রিকশা নিয়ে আসেন। রেলওয়ে লাইন পার হয়ে তিনি প্রধান সড়কের দিকে যান না।

সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ করে দিলে আমরা খামু কি? এত দিনতো নেতাগো চাঁদা দিয়া গাড়ি চালাইছি। কিন্তু এখন তো পুলিশ গাড়ি নিলে আর পামু না। তাই এখন ফায়দাবাদের রেলওয়ে লাইনের এপারেই থাকি। আব্দুল্লাহপুর গেলেই পুলিশ গাড়ি আটকাইবো। ’

এদিকে আশকোনা এলাকার ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক মনির বাংলানিউজকে বলেন, ‘মানুষের মুখে মুখে শুনতাছি, ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধ কইরা দেবে সরকার। তাহলে আগে আমাদের একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিক। না হলে আমরা কি করে খামু। কোনো জায়গাতে কাজ না পাইয়া তাই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাইয়া সংসার চালাই। তাও বন্ধ করে দিয়ে কেমনে সংসার চালাবো। ’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়ক বাদে এলাকার অলিগলিতে চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। অলিগলিতে যাত্রীর তুলনায় অটোরিকশার সংখ্যা অনেক বেশি। এদিকে এই রিকশা চলাচলে কোনো শৃঙ্খলা দেখা যায়নি। তবে এ রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের পর চালকরা প্রধান সড়কের মুখে না এলেও কিছুটা ভেতরে দাঁড়িয়ে থেকে যাত্রী তুলছিলেন।  

রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর, কামারপাড়া, উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরা পাঁচ নম্বরের আহলিয়া, খিলক্ষেত, বাড্ডা, রামপুরা, সূত্রাপুর, ডেমরা, ওয়ারী, যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর চাঁদনগর, বেড়িবাঁধ, মিরপুরের বিভিন্ন অলিগলিতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক (উত্তরা) বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাইফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি অবৈধ যান। আমরা আগে থেকেই এই যানগুলো চলাচলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছি। এখনও নিচ্ছি। ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের যে সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই অনুযায়ী ইতোমধ্যে আমরা কঠোরভাবে কাজ শুরু করেছি। আমাদের অভিযান চলছে।

গাজীপুরে অটোরিকশার অনিয়ন্ত্রিত চলাচল:

ঢাকার অদূরে গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা, টঙ্গী পশ্চিম থানা, গাজীপুর সদর থানা, গাছা থানা, পুবাইল, কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, বাসন থানা এলাকার সব কয়টি অলিগলিসহ এমনকি প্রধান সড়কেও বেপরোয়াভাবে চলাচল করে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এই বাহনটির চলাচল খুব বেশি। প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে এতদিন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হলেও বর্তমানে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্তের নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে আমাদের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা বিভিন্নস্থানে অভিযান শুরু করেছি। এই অঞ্চরে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা খুব বেশি। তাই ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি ক্রাইম বিভাগের পাঁচটি থানার পুলিশ সদস্যরাও কাজ করছেন। কারণ ট্রাফিক বিভাগের একার পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়। তাই থানা পুলিশও সহায়তা করছে।

এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে চালকদের দাবি, লাখো মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এ রিকশার ওপর। সরকার যদি এই বাহনটি বন্ধ করে দেয়, তবে আমাদের জীবিকার একটি ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, জুন ২৫, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।