রাজশাহী: চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই পোহাতে হচ্ছে লকডাউনের ধকল। এর ওপর নতুন রূপে শুরু হয়েছে ‘কঠোর লকডাউন’।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে রাজশাহী মহানগরীতে গত ১১ জুন থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ‘বিশেষ লকডাউন’ জারি করে জেলা প্রশাসন। পরে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা আসার পর রাজশাহীর আম চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে। আমের ভরা মৌসুমের শেষের দিকে। অথচ এখন পর্যন্ত রাজশাহীর অধিকাংশ চাষি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ খরচই তুলতে পারেননি। আবার বাগানের ৪০ শতাংশ আমও গাছে থেকে গেছে। ফলে আম ব্যবসা নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
আম চাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরু থেকেই বাজার নিম্নমুখী। আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা না থাকায় বেচাকেনায় ধস নেমেছে। অধিকাংশ চাষি উৎপাদন খরচ তুলতে পারেননি। অন্যদিকে ৪০ শতাংশ আম এখনো গাছেই থেকে গেছে। বাজারে এখন কিছু আম্রপালি ও ফজলি আম মিলছে। আর কিছু থেকে গেছে গাছেই। আর মৌসুমের শেষ আম আশ্বিনা ও বারি-৪ গাছে রয়েছে পরিপক্বতার অপেক্ষায়। এই অবস্থায় কঠোর লকডাউন ও আসন্ন ঈদের ছুটি তাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ।
রাজশাহীর স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা বলছেন- লকডাউনে ক্রেতা সংকটে পড়েছে জেলা ও উপজেলার আম ব্যবসায়ীরা। হাটে আমের সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা কম। লকডাউনের কারণে দূরের পাইকাররা আসতে না পারায় আম বিক্রি করতে পারছেন না। এতে আম ব্যবসা নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। বিশেষ ব্যবস্থায় বাজার ও আম পরিবহন চালু থাকলেও তাতে খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কেজেএম আব্দুল আওয়াল জানান, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭৩ হেক্টর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম নামান চাষিরা। উন্নতজাতের মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে ও খিরসাপাত (হিমসাগর) ১ জুন থেকে নামানো শুরু হয়েছে। জুন মাসের শেষের দিকে ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি নামানো শুরু হয়। সবশেষে আগামী ১৭ জুলাই থেকে নামানো শুরু হবে মৌসুমের শেষ আম আশ্বিনা ও বারি-৪।
রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে ব্যবসা করেন চারঘাটের আম চাষি আজমল হোসেন। তিনি আম ব্যবসার হালচাল নিয়ে কথা বলেন বাংলানিউজের সঙ্গে।
এই আম ব্যবসায়ী জানান, বাজারে উৎসুক মানুষের ভিড় থাকলেও, নেই ক্রেতা। এর ওপর এখন আবার আমের দোকান বসাতে দিচ্ছে না পুলিশ। ব্যবসা একরকম বন্ধই। অথচ বাগানে এখনও অন্তত হাজার মণ আম আছে। অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা কম আসায় এবার আমের ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ানের আম চাষি নুরুল ইসলাম বলেন, গোপালভোগ ও হিমসাগর আমে লক্ষাধিক টাকার লোকসান হয়েছে। ফজলি আম প্রতি মণ মাত্র ৫শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাগানে কিছু গাছে এখনো ফজলি ও আশ্বিনা আম রয়েছে। সেগুলো নিয়ে একটু চিন্তায় আছি।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ভালুকগাছীর আম চাষি হোসেন আলী বাংলানিউজকে জানান, তার ১০ বিঘা জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এবারই নতুন বাগান কিনেছিলেন। আমের ফলনও হয়েছে ভালো। তবে ক্রেতা সঙ্কটে দাম পাচ্ছেন না। লকডাউনে দাম পড়ে যাওয়ার কারণে আম বিক্রির যে টাকা আশা করেছিলেন তা সম্ভবত পূরণ হবে না। এখনও ৪ বিঘা বাগানের আম রয়ে গেছে।
জানতে চাইলে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, বাগানে এখনও প্রায় ৪০ শতাংশ আম রয়েছে। অনেক আম গাছে পেকে যাচ্ছে। নতুনভাবে কঠোর লকডাউন হওয়ায় গাছেই পাকছে অনেক আম। চাষিরা লকডাউনের পরে আম নামাবেন। এতে তো কিছুটা ক্ষতি হবেই। কিন্তু জাতীয় স্বার্থে এই ক্ষতি সবাইকে মেনে নিতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০২১
এসএস/এএ