ঢাকা, রবিবার, ১৪ পৌষ ১৪৩১, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জাতীয়

বছরে ভাড়া দুই লাখ, ব্যবসা কোটি কোটি টাকা!

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২১
বছরে ভাড়া দুই লাখ, ব্যবসা কোটি কোটি টাকা!

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল শহরের জেলা সদর সড়কের পাশে ৬৬ শতাংশ অর্পিত ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি প্রায় দুই লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছে পৌরসভা। আর ইজারা নেওয়ার পরপরই শুরু করা হয়েছে ৬৭টি দোকান নির্মাণ কাজ।

 

বটতলা বাজারটি রাস্তার ওপর বসার কারণে নতুন ওই ইজারাকৃত স্থানে কাঁচা বাজারটি স্থানান্তরের কথা রয়েছে। তবে বাজার কমিটির সদস্যরা এ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন। এছাড়া এলাকাবাসী ওই জমিতে বাজার স্থাপন না করে পার্ক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।

বাজার কমিটির সদস্যরা বলছেন, দুই লাখ টাকায় ৬৬ শতাংশ জমি ইজারা নিয়ে পৌরসভা শুরুতেই দোকান বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করে যাবে। আর পরে ওই জমির ইজারা বাতিল হলে দোকান মালিকদের টাকা ফেরত পেতে নাজেহাল হতে হবে। আবার এক বছর পর পৌরসভা নতুন স্থানে নির্মাণ করা দোকান ভেঙে ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে সে সময় আবার মোটা অংকের টাকা দাবি করবে। তখন অনেক ব্যবসায়ী টাকা দিতে পারবেন না। এতে করে তাদের পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, শহরের আকুরটাকুর পাড়া মৌজায় ৬৬ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তিভুক্ত জমি ১৯৭২ সালে তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বাৎসরিক ভাড়ায় ইজারা নেন। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত তিনি ভাড়া পরিশোধ করতেন। একপর্যায়ে লতিফ সিদ্দিকী নিজেই ওই জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেন। মামলায় নিম্ন আদালতে তিনি ডিক্রি পান। সরকার পক্ষ জেলা জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে লিপ-টু আপিল করেন। ওই সিভিল ডিভিশন মামলায় সরকার পক্ষে রায় দেন আদালত। পরে লতিফ সিদ্দিকী উচ্চ আদালতে সরকারের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্টও সরকারের পক্ষে রায় দেন।

পরে বিগত ২৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর দখল থেকে জমিটি উদ্ধার করে। এসময় লতিফ সিদ্দিকীর নির্মাণ করা স্থাপনাও ভেঙে ফেলা হয়। জেলা প্রশাসন জমিটিতে একটি পার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। পার্কটি বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শেখ রাসেলের নামানুসারে ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ নামকরণের ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু পরে পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ না নিয়ে জমিটি টাঙ্গাইল পৌরসভাকে ইজারা দেওয়া হয়। পৌরসভা সেখানে শহরে বটতলা কাঁচা বাজারটি স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই জায়গায় ৬৭টি দোকান (ইটের গাথুনি) এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য উন্মুক্ত শেড নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালেও এর নির্মাণ কাজ চলছে।

স্থানীয়রা জানান, বটতলা বাজারটি রাস্তার ওপরে বসে, এ জন্য এটি স্থানান্তর প্রয়োজন। কিন্তু সেটি জেলা সদর সড়কের পাশে স্থানান্তর করা হলে আরো বেশি অসুবিধার সৃষ্টি হবে। বাজার স্থাপনের নকশা করা হলেও সেখানে কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই। ফলে বাজারে মালামাল আনা নেওয়ার গাড়ি এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের গাড়ি এলে ব্যস্ততম জেলা সদর সড়ক এবং উত্তর পাশে তালতলা সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকবে। এছাড়া আবাসিক এলাকায় কাঁচাবাজার হলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হবে। তাই বটতলা বাজারটি অন্য কোথাও স্থানান্তর করে এ স্থানে একটি পার্ক নির্মাণ করলে ভালো হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা আইনজীবী রফিকুল ইসলাম জানান, পৌরসভা এক বছরের জন্য জমিটি ইজারা নিয়েছে। সেই মোতাবেক ওই স্থানে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক এবং পাকা-বা আধাপাকা কোনো স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু পৌর কর্তৃপক্ষ সেখানে ইটের গাথুনি দিয়ে দোকান নির্মাণ করছে। আর পরে ওই দোকানগুলো মোটা অংকের টাকায় বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভড়ার পায়তারা চলছে। একইসঙ্গে পরের বছর কোনো কারণে এর ইজারা বাতিল হলে ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। এতে করে ওই স্থান নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বটতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির এক সদস্য জানান, বজারের বটতলা মোড় থেকে তালতলা মোড় পর্যন্ত যে কয়েকজন ব্যবসায়ী আছেন, তাদের একজনকেও রেখে তারা নতুন স্থানে যাবেন না। যদি নতুন স্থানে যেতে হয়, তাহলে সবাইকেই দোকান বরাদ্দ দিতে হবে, তাও আবার ন্যুনতম টাকায়। এ জন্য তারা পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে তালিকাও পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে মুদি দোকান ৪০টি, সবজি-মসল্লা ৩৭টি, মুরগির ২২টি, গরুর মাংসের দোকান চারটি, খাসির মাংসের দোকান দু’টি, মুরগির দোকান সাতটি এবং খোলা শেডে মাছের জন্য ৭৭টি ও কাঁচা বাজারের জন্য ৭১টি দোকানের তালিকা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বাংলানিউজকে জানান, উদ্ধার করা এ জায়গাটি ফেলে রাখলে আবার দখল হয়ে যেতে পারে। তাই উদ্ধার করার পর সেখানে ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ স্থাপনের পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ‘শেখ রাসেল শিশু পার্ক’ স্থাপন না করে অন্য কোনো জনস্বার্থে ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। এছাড়া অর্পিত ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি সরকারি কোনো দপ্তরকে স্থায়ীভাবে দেওয়ার বিধান নেই। এছাড়া বটতলা বাজারটি রাস্তার ওপরে বসে। সেটি স্থানাস্তরের জন্য দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় উদ্ধারকৃত জায়গাটিতে বটতলা বাজার স্থানান্তরের দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। পরে অস্থায়ীভাবে শর্ত সাপেক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভাকে জমিটি বাৎসরিক প্রায় দুই লাখ টাকা ভাড়ায় অবাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৬৭টি দোকান এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য শেড স্থাপন করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২১
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।