ঢাকা: আগামী রোববার (১ আগস্ট) থেকে রপ্তানিমুখী কলকারখানা খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর চরম বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান কঠোর বিধিনিষেধে যান চলাচল বন্ধ থাকায় রিকশা-ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজি, হেঁটে যে যেভাবে পারছেন ঢাকায় ফিরছেন।
শনিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর অন্যতম প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। হাজার হাজার মানুষ রিকশা-ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, প্রাইভেট কার ও হেঁটে ঢাকায় ঢুকছেন।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার বাসিন্দা রাকিব হাসান সাভারের একটি গার্মেন্টেসে কাজ করেন। অফিস থেকে ফোন করে তাকে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
চাকরি বাঁচাতে তিনি শনিবার (৩১ জুলাই) ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
প্রথমে তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রামগঞ্জ উপজেলা সদরে আসেন। সেখান থেকে আরেকটি অটোরিকশায় হাজিগঞ্জ উপজেলা সদরে আসেন। হাজিগঞ্জ থেকে অটোরিকশায় কচুয়া বাজার আসেন। কচুয়া বাজার থেকে আরেকটি অটোরিকশায় সাচার বাজার আসেন। সাচার বাজার থেকে আরেকটি অটোরিকশায় গৌরিপুর আসেন।
গৌরিপুর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার হেঁটে শনির আখড়া পর্যন্ত আসেন। দুপুর আড়াইটার পর শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছান তিনি। শনির আখড়া থেকে সাভার যেতে বাকি পথও হেঁটে যাবেন রাকিব হাসান।
শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে অবস্থানকালে রাকিব হাসান বাংলানিউজকে বলেন, রিকশা-অটোরিকশাতে ভেঙে ভেঙে গৌরিপুর আসতে আসতে পকেটের সব টাকা শেষ। পরে হাঁটতে শুরু করি। মাঝে মধ্যে একটু ঝিরিয়ে আবার হাঁটি। এভাবে এ পর্যন্ত আসলাম। পাগুলো মনে হচ্ছে অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কী করবো পকেটে টাকা নেই।
রাকিব জানান, তার মতো আরও অনেক মানুষকে তিনি হেঁটে ঢাকায় আসতে দেখেছেন। আবার অনেকে অটোরিকশা, ভ্যানে করে ভেঙে ভেঙে ঢাকায় ফিরছেন।
তিনি বলেন, একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে তামাশা করছে। আর বেশি কিছু বলার নেই।
চাঁদপুর থেকে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় আসেন মারুফ হাসান। তিনি রিকশা-ভ্যান, অটোরিকশা ও হেঁটে ঢাকা আসেন।
মারুফ বলেন, হাজিগঞ্জ থেকে কচুয়া, কচুয়া থেকে গৌরিপুর অটোরিকশায় আসেন। গৌরিপুর থেকে দাউদকান্দি অটোরিকশা, দাউদকান্দি ব্রিজের টোলঘর থেকে হেঁটে দাউদকান্দি ব্রিজ পার হন। সেখান থেকে আবার রিকশা নিয়ে গোমতি ব্রিজ পার হন। গোমতি ব্রিজ থেকে হেঁটে সোনারগাঁ পর্যন্ত আসেন। সোনারগাঁ থেকে অটোরিকশায় কাঁচপুর ব্রিজ আসেন। কাঁচপুর ব্রিজ হেঁটে পার হয়ে চিটাগাং রোড থেকে অটোরিকশায় সাইনবোর্ড আসেন।
তিনি বলেন, সাইনবোর্ড থেকে ভ্যানে যাত্রাবাড়ী যাবো। সেখান থেকে আবার রিকশা বা অন্য কোনোভাবে মিরপুর যাবো।
ফেনী থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে সাইনবোর্ড আসেন আনোয়ার হোসেন। সাইনবোর্ড থেকে ভ্যানে করে তিনি যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাবেন। সেখান থেকে রিকশা বা হেঁটে মেরুল বাড্ডা যাবেন।
চরম দুর্ভোগে পড়া ঢাকায় আসা এসব মানুষ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২১
এমইউএম/আরবি