ঢাকা: চিড়িয়াখানা পরিচালনা এবং চিড়িয়াখানায় প্রাণী প্রদর্শনের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-বিধান যুক্ত করে ‘বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা আইন, ২০২১’ এর খসড়া মন্ত্রিসভায় উঠতে যাচ্ছে।
আইন অনুযায়ী, চিড়িয়াখানায় কোনো অবস্থাতেই রুগ্ন, দুর্বল, কৃশকায় বয়স্ক প্রাণী প্রদর্শন করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (০৯ আগস্ট) ভার্চ্যুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশ চিড়িয়াখানা আইন, ২০২১’ খসড়া উপস্থাপন করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে সরকারি পর্যায়ে রংপুর ও ঢাকা চিড়িয়াখানা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। এ দুটি চিড়িয়াখানাসহ অন্যান্য চিড়িয়াখানা ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন, বিধি-বিধান নেই।
বিশ্ব চিড়িয়াখানা ও অ্যাকোয়ারিয়াম সমিতির সদস্য পদ অর্জনের জন্য এবং চিড়িয়াখানার ব্যবহারের জন্য বিপন্ন বন্যপ্রাণী আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে চিড়িয়াখানা আইনের প্রয়োজন। বাংলাদেশে চিড়িয়াখানা স্থাপন এবং চিড়িয়াখানায় আবদ্ধ প্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা আইনে পরিচালিত হবে।
আইনের খসড়া অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাণীর প্রজননের জন্য চিড়িয়াখানাসমূহের মধ্যে প্রাণী বিনিময় ও ধার করতে পারবে। বিজ্ঞানসম্মতভাবে চিড়িয়াখানার উন্নয়ন ও সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য কারিগরি ও অন্যান্য সহায়তা দিতে পারবে।
চিড়িয়াখানার জন্য প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা উপদেষ্টার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি উপদেষ্টা কমিটি দর্শনার্থী প্রবেশ ফি নির্ধারণ, প্রাণীদের প্রদর্শনের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ, প্রতিবছর উন্নয়ন ব্যয় নিরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় গবেষণা কাজ করবে।
চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনায় বলা হয়, হাতি, ঘোড়া ও গাধা ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীকে রাইডিং কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কোনো অবস্থাতেই রুগ্ন, দুর্বল, কৃশকায় বয়স্ক প্রাণী প্রদর্শন করা যাবে না। সপ্তাহে একদিন চিড়িয়াখানা বন্ধ রাখা যাবে। সবুজ বৃক্ষ দিয়ে চিড়িয়াখানা আচ্ছাদিত করে ২৫ শতাংশের বেশি জায়গা কোনো ভবনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। চিড়িয়াখানার ভেতরে কোনো অবস্থাতেই স্টাফ/অফিসার কোয়ার্টার বা আবাসিক এলাকা তৈরি করা যাবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়াও চিড়িয়িাখানার প্রবেশদ্বারসহ প্রয়োজনীয় স্থানে বায়োসিকিউরিটির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রাণীর স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরির কথা বলা হয়েছে।
প্রাণিস্বাস্থ্য বা ভেটিরিনারি কাজের মধ্যে রয়েছে— প্রত্যেক চিড়িয়াখানাতে ভেটেরিনারি চিকিৎসার সুযোগসহ রোগ নির্ণয়, সংগ নিরোধ ব্যবস্থা রাখা, ২৪ ঘণ্টার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাণী চিকিৎসকের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রত্যেক চিড়িয়াখানায় প্রাণীর মৃত্যুর পর পোস্টমর্টেম সুযোগসহ মৃতদেহ পিট বা এয়ারটাইট কূপ অথবা পুড়িয়ে ফেলার জন্য ইনসেনারেটরের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপত্তা বিধান, টয়লেট, প্রাথমিক চিকিৎসা এবং হালকা পানীয়-জলের ব্যবস্থা; বৃদ্ধ, পঙ্গু ও প্রতিবন্ধী দর্শনার্থীর জন্য হুইল চেয়াররের বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে।
আইনের খসড়ায় জেল-জরিমানারও বিদান রাখা হয়েছে। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যে কোনো মিনি চিড়িয়াখানা, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি কিংবা অন্য কোনো চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করতে পারবে না। তা অমান্য করলে এক বছর বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৫০ সালে হাইকোর্ট চত্বরে জীব-জন্তুর প্রদর্শনশালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চিড়িয়াখানাটি। পরবর্তীকালে ১৯৭৪ সালে বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এটির নাম পরিবর্তন করে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা নামকরণ করা হয়। এই চিড়িয়াখানার আয়তন প্রায় ৭৫ হেক্টর। চিড়িয়াখানার চত্বরে ১৩ হেক্টরের দুটি লেক আছে।
বাংলাদেশ সময়: ০০৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২১
এমআইএইচ/এমজেএফ