ঢাকা, সোমবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৪ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

যমুনা পাড়ে সর্ববৃহৎ সোলার পার্কের শেডের নিচে সবজি চাষ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০২১
যমুনা পাড়ে সর্ববৃহৎ সোলার পার্কের শেডের নিচে সবজি চাষ

ঢাকা: জামালপুরে যমুনা নদীর পাড়ে নির্মাণ করা হবে দেশের সবচেয়ে বড় ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ সোলার পার্কের নাম হবে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক।

এখানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করা হবে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে মুরগির খামার করার পরিকল্পনাও রয়েছে।

‘শেখ হাসিনা সোলার পার্ক, জামালপুরের মাদারগঞ্জ ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের অধীনে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৫১১ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় ভারতীয় ঋণ এক হাজার ১১৫ কোটি টাকা।

২০২১ সালে জানুয়ারি থেকে ২০২৩ ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।  

অন্যদিকে শেরেবাংলা নগরের মন্ত্রিসভা কমিটি পরিষদ (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত থাকবেন। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করবেন।

৩২৫ দশমিক ৬৫ একর জমির ওপর ২০ বছর মেয়াদী সোলার প্ল্যান্ট নির্মিত হবে। এখন পর্যন্ত এটাই দেশের সবচেয়ে বড় সোলার প্ল্যান্ট বলে দাবি করেছে রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (আরপিসিএল)।  

এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি সবজি চাষ ও মুরগির খামারে দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে বলে দাবি করেছে আরপিসিএল।

প্রকল্প প্রসঙ্গে আরপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবদুস সবুর বাংলানিউজকে বলেন, যমুনা নদীর পাড়ে দেশের সবচেয়ে বড় সোলার কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ খাতে ঋণ দেবে ভারত। ২০ বছর মেয়াদী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে দেশের বিদ্যুতের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হবে। যমুনার পাড়ে খাস জমিতে নির্মাণ করা হবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এছাড়া এখানকার ১৮০টি পরিবারকে পুনর্বাসনও করা হবে।

দেশে জমি স্বল্পতা থাকলেও সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ জমি তেমন উর্বর নয়। মাটি ভরাট করে সোলার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। তারপরও প্রকল্প এলাকায় সবজিসহ হাঁস-মুরগি পালনের ব্যবস্থা করা হবে।

আরপিসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকার দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে। এ লক্ষ্যে আরপিসিএল জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজরচর মৌজায় ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

আরপিসিএল সূত্র জানায়, নানা কারণে অবশেষে এ প্রকল্পে বড় অংকের ঋণ আসছে ভারত থেকে। ভারতীয় ঋণের আওতায় বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাটে ১০০ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের লক্ষ্যে আরপিসিএল ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় জলাশয় থাকায় তা ভরাট করা হলে পরিবেশ ও বাস্তুগত ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে জলাশয় ভরাট না করে ফিশারিজসহ অনান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। একটি বিস্তারিত স্টাডির ভিত্তিতে সোলার প্যানেল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্প নতুনভাবে ডিজাইন করার জন্য সিদ্ধান্ত হয়।

একনেক সভার নির্দেশনা অনুসারে প্রকল্প এলাকার জলাশয়ে ফিশারিজসহ অন্যান্য কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের সুবিধা রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সোলার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। কিন্তু আর্থিক ও কারিগরি দিক থেকে এ দু’টি পদ্ধতিতে মোল্লারহাট প্ল্যান্ট স্থাপনের উপযোগিতায় নেই।  

এর ফলে ২০১৪ সালে বিদ্যুৎ বিভাগে অনুষ্ঠিত প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি মোল্লারহাটের পরিবর্তে জামালপুরের মাদারগঞ্জে নির্মাণের সুপারিশ করা হয়।

আরপিসিএল জানায়, যমুনার পাড়ে শেখ হাসিনা সোলার পার্ক স্থাপনের জন্য সরকারি অনুমোদন রয়েছে। সোলার পার্কে আরপিসিএল-এর প্রস্তাবিত ১০০ মেগাওয়াট গ্রিড টাইপ সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়াও আরও একটি ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।   
এদিকে আরপিসিএল এ প্রকল্পের জন্য মাদারগঞ্জ উপজেলার জোড়খালী ইউনিয়নের কাইজারচর মৌজায় যমুনা নদীর নিকটবর্তী এলাকায় সরকারি খাস জমি নির্বাচন করা হয়েছে।  

ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ২০২০ সালে ৩২৫ দশমিক ৬৫ একর জমির দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত করা হয়েছে। যমুনা নদী প্রকল্প এলাকা থেকে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বিধায় উক্ত এলাকার ভূমি তুলনামূলক স্থিতিশীল।  

সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় ওই এলাকায় বন্যা ও নদী ভাঙনের ঝুঁকি কম রয়েছে। এ কারণে প্রকল্পের জন্য নদীর পাড়ে কোনো বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন হবে না। তবে সৌর প্যানেলগুলোর সুরক্ষার জন্য প্রকল্প এলাকার চারপাশে ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করা হবে।  

এছাড়া সম্ভাব্যতা সমীক্ষার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী প্রকল্প এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২ মিটার উঁচু হলেও বন্যা থেকে রক্ষার জন্য ভূমি উন্নয়ন করে অতিরিক্ত ০২ মিটার উচ্চতায় (সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৪ মিটার) লেভেলিং করা হবে।  

প্রকল্পের আওতায় ১৩২ কেভি ক্ষমতাসম্পন্ন ৪৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, ৮৮টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২১
এমআইএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।