ঢাকা: সমীক্ষা না করেই ৭৫৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। ১০০ কোটি টাকার ওপরে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করার আগে তৃতীয় পক্ষ দিয়ে সমীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা করা হয়নি।
সঠিকভাবে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সমীক্ষা বাধ্যতামূলক বলে জানায় পরিকল্পনা কমিশন।
বরগুনা জেলার অধীনে পায়রা নদীর ভাঙন হতে আমতলী শহর এবং আরপাঙ্গাশিয়া ও ঘটখালি বাজার প্রতিরক্ষা এবং পোল্ডার ৪৩/১ ও ৪৪বি অভ্যন্তরে টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের আওতায় এমন প্রস্তাব করা হয়। চলতি সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
প্রকল্পটি নিয়ে কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) রমেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। সমীক্ষা না করার বিষয়ে পিইসি সভায় আলোচনা হয়। সম্ভাব্যতা সমীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতার জন্য বাপাউবোর অভ্যন্তরীণ কমিটির সঙ্গে পানি সম্পদ সেক্টরের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একাধিক সদস্যের নেতৃত্বে অন্যান্য সভা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিটির সদস্য বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটে (আইডব্লিউএফএম) অথবা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস), পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মাধ্যমেই হালনাগাদ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা সম্পাদন করে ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) সংযুক্তির বিষয়ে মত দিয়েছে কমিশন।
প্রকল্পের আওতায় একটি সাইট অফিস নির্মাণের সংস্থান বাদ দেয়ার বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়। এছাড়া প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় বিগত বছরে কি কি প্রকল্প গ্রহণ ও কার্যক্রম সম্পন্ন তার বিস্তারিত বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রকল্পের লগফ্রেমে ইনপুট ও উদ্দেশ্যের বস্তুনিষ্ট যাচাই নির্দেশসমূহ যথাযথ হওয়া প্রয়োজন। এছাড়া ডিপিপির অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বাদ দিতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সুবন্দী খালের আওতায় ১৫ কিলোমিটার কচুরিপানা অপসারণ বাবদ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতি মিটার কচুরিপানা অপসারণে ব্যয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাপাউবো জানায়, কচুরিপানা অপসারণ ব্যয় হালনাগাদ রেট সিডিউল অনুযায়ী প্রতি বর্গমিটার হিসাব করে নির্ধারণ করা হয়েছে। কচুরিপানা অপসারণে অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানের ভিত্তি ও পরিষ্কারের পর খালটির রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা কি হবে তার তথ্য পুনর্গঠিত ডিপিপিতে উল্লেখ করার বিষয়ে সিন্ধান্ত দিয়েছে কমিশন।
কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) মো. মতিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা হয়েছে। সমীক্ষা না করেই প্রকল্পের প্রস্তাবনা করা হয়েছিল। পিইসি সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে সমীক্ষা করেই প্রকল্পের পুনঃপ্রস্তাব করতে হবে কমিশনে। সমীক্ষা না পরিকল্পনা শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। ১০০ কোটি টাকা বেশি ব্যয়ের প্রকল্প অবশ্যই সমীক্ষা করতে হবে। সমীক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন না করলে বার বার সময় ও ব্যয় বাড়ে। প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়নে সমীক্ষার বিকল্প নেই।
প্রকল্পের অন্যদম উদ্দেশ্য হচ্ছে খাল খনন, রেগুলেটর মেরামত/পুননির্মাণ, নদীতীর সংরক্ষণ এবং বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ কাজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নদী ভাঙন রোধ করা। প্রকল্প এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, লবণাক্ত পানির প্রবেশ রোধ এবং টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙন হতে অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ, অফিস, আদালত, ঘরবাড়ি, রাস্তা ঘাটসহ অগণিত স্থাপনা সুরক্ষা এবং টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি। প্রকল্প এলাকার ভূমিহীন, দরিদ্র এবং বিপদ সংকুল জনগণের জন্য কর্মসংস্থান এবং নগদ আয়ের সুযোগ্য সৃষ্টির মাধ্যমে এলাকার উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচন।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম ৫ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, সাড়ে ৫ কিলোমিটার বাঁধের ঢাল সংরক্ষণ, ১৮০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ৮ দশমিক ৬০ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত, ৬১ দশমিক ৫০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন। ১৫ কিলোমিটার কচুরিপানা অপসারণ, ১২টি রেগুলেটর পুন:নির্মাণ, ৬টি রেগুলেটর মেরামত, ৫টি ব্রিজ নির্মাণ, ২টি সাইট অফিস নির্মাণ ও বনায়ন কাজ করা।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, বিগত ৩০ বছরের পানির স্তরের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন উচ্চতা, স্রোতের সর্বোচ্চ গতিবেগ, মৃত্তিকা পরিস্থিতি ও পলি/বালি জমা হওয়ার হার ও গত ১০ বছরে নদী তীর ভাঙনের চিত্রসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সংযোজন করত হবে। নদী তীর সংরক্ষণ, নদী তীর সংরক্ষণ কাজ মেরামত, ঢাল সংরক্ষণ কাজ ও পুনরাকৃতিকরণের জন্য প্রস্তাবিত বাঁধের পরিমাপ (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা ও ঢাল) স্থান (জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন) ও মাটির পরিমাণ ঘনমিটার ডিপিপিতে উল্লেখ করতে হবে।
একইসাথে নদী তীর সংরক্ষণ কাজের ক্ষেত্রে জিও ব্যাগ টেকসইভাবে স্থাপন করতে হবে। এছাড়া নদী তীর সংরক্ষণ কাজের পর কি কি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা পাবে তা ছক আকারে ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। প্রকল্পের বাঁধ নির্মাণ/পুনরাকৃতিকরণের ক্ষেত্রে নদীর ফ্ল্যাড প্ল্যানের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও মৎস্য ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর চলাচলের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ স্থান সংস্থান রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২১
এমআইএস