ঢাকা: এ কে ফ্যাশন, পোলো টি-শার্ট, শার্ট ও জ্যাকেট তৈরি করা হতো। তিন মাসে গড়ে ওঠা এ গার্মেন্টস কারখানায় ২১০ জন শ্রমিককে চাকরি দিয়েছিলেন মালিক আব্দুল কাইয়ুম ওরফে ছোটন (৩১)।
তিন মাসে গার্মেন্টস ব্যবসার আড়ালেই ভাড়া করার গাড়িগুলোর ২০ থেকে ২২টি গাড়ি অন্য মানুষদের কাছে কম মূল্যে বিক্রি করে দেন কাইয়ুম। পরে শ্রমিকদের বেতন না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান তিনিসহ তার সহযোগীরা।
গাড়ির আসল মালিকরা ভাড়ার টাকা না পেয়ে খোঁজ করতে থাকেন গার্মেন্টস মালিক কাইয়ুমকে। এবিষয় প্রতারক আব্দুল কাইয়ুমের বিরুদ্ধের রাজধানী ধানমন্ডি, গাজীপুরের গাছা থানাসহ তিন থানায় মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়টি নজরে এনে তদন্তে প্রতারক চক্রের সন্ধান পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গার্মেন্টস ব্যবসার নামে অভিনব কায়দায় প্রতারণা করার দায়ে এ চক্রের মূলহোতা কাইয়ুমসহ তার সাত সহযোগীকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাতটি গাড়িও জব্দ করে পুলিশের এ তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা।
সোমবার (৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থার এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) মুক্তার ধর।
তিনি বলেন, প্রতারক কাইয়ুম ওরফে ছোটন ওরফে ইসতিয়াক ওরফে মেহেদী হাসান গাজীপুরের গাছা থানাধীন একটি চার তলা বাড়ির ৩য় ও ৪র্থ তলায় এ কে ফ্যাশনস নামে একটি পোশাক কারখানা চালু করেন। কারখানা দেখিয়ে তিনি ২২টি গাড়ি ভাড়া নেন। এরপর গাড়ির মূল মালিকদের না জানিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে গাড়িগুলো অবৈধভাবে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন তিনি। গাড়ি বিক্রির নগদ তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক চক্রটি আত্মগোপনে চলে যায়। এতে ভুক্তভোগীরা তাদের গাড়ি ও আব্দুল কাইয়ুমের কোনো সন্ধান না পেয়ে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা দায়ের করেন।
তিনি আরও বলেন, সিআইডি তদন্তের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটিকে চিহ্নিত করে। মানিকগঞ্জ পৌরসভার শহীদ রফিক সড়ক থেকে আব্দুল আলী মিজি ওরফে আব্দুল হাই (৪৬) ও তার ছেলে নাজমুল হাসানকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ‘সেলুন টয়োটা’ প্রাইভেটকার (রেজি: ঢাকা মেট্রো গ- ২৩-৪২১৪)।
জিজ্ঞাসাবাদে আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে চক্রটির প্রধান সহযোগী সানি রহমানকে (২০) দিনাজপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী রংপুর শহরের শাপলা চত্বর এলাকা থেকে সাজরাতুল ইয়াকিন রানাকে (৩৩) গ্রেফতার ও সাদা রংয়ের ‘এক্সজিও’ প্রাইভেটকার (ঢাকা মেট্রো গ ২২-৪৭৪০) উদ্ধার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যাদি পর্যালোচনা শেষে উত্তরা এলাকা থেকে আরো চারটি চোরাই গাড়ি উদ্ধার করা হয়। এলআইসির একাধিক চৌকস টিম ঢাকা ও পাশ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রতারক চক্রটির সক্রিয় সদস্য আলমগীর শেখ (৪৮) মো. সেলিমকে (২৭) একটি কালো রংয়ের ‘এক্সজিও’ প্রাইভেটকারসহ (ঢাকা মেট্রো গ- ৩৫-০৭৩০) গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের মূল হোতা কথিত গার্মেন্টস ব্যবসায়ী কাইয়ুমের নাম উঠে আসে। তার বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়ার কাছারীমোড়া এলাকায়।
এরপর অভিযান চালিয়ে খুলনার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়ার প্রাক্কালে আত্মগোপনে থাকা প্রতারক চক্রের মূলহোতা কাইয়ুমকে গ্রেফতার করে সিআইডি।
সিআইডির এই বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তার বলেন, কাইয়ুম গাজীপুরে একটি এনজিও’তে চাকরি করতেন। সেখানে আর্থিক লেনদেনে অস্বচ্ছতার কারণে তার চাকরি চলে যায়। এরপর তিনি গাজীপুরের গাছা থানাধীন একটি চার তলা বাড়ির ৩য় ও ৪র্থ তলায় এ কে ফ্যাশনস নামে পোশাক কারখানা স্থাপন করেন। সেখানে তিনি নাম মাত্র বেতন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় ২১০ শ্রমিককে নিয়োগ দেন।
চলমান করোনা ও লকডাউনের মধ্যে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায় বিদেশি ক্রেতাদের পরিবহনের কথা বলে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ২২টি গাড়ি ভাড়া নেন। পরবর্তীতে গাড়ির মূল মালিকদের অগোচরে প্রতারণার মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে গাড়িগুলো অবৈধভাবে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে বিক্রি করে দেন। এরআগে তিনি প্রত্যেকটি গাড়ির জিপিএস সিস্টেম অকেজো করে দেন। গাড়ি বিক্রির নগদ তিন কোটি ৮০ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক চক্রটি আত্মগোপনে চলে যান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তার বলেন, কাইয়ুমের গার্মেন্টস স্থাপনের মেয়াদ ছিল মাত্র তিন মাস। এ স্বল্প সময়ে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করা যায় না। প্রতারণার উদ্দেশে তিনি গার্মেন্ট ব্যবসা শুরু করেন। যখন প্রতারণার বিয়ষটি ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারেন তখন তিনি যাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করেছেন তাদের ঠিকানা দেন।
তিনি বলেন, তিনি শুধু ভুক্তভোগীদের সঙ্গেই প্রতারণা করেননি, বরং যাদের কাছে গাড়ি বিক্রি করেছেন তাদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন।
কাইয়ুমসহ অন্য প্রতারকদের বিরুদ্ধে গাজীপুরের গাছা থানায় মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
প্রতারণার শিকার ধানমন্ডির অনু চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দুই মাস আগে অফিসে গাড়ি ভাড়া দেওয়া হবে মর্মে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলাম। ওই বিজ্ঞাপন দেখেই কাইয়ুম আমার দেওয়া ঠিকানায় চলে আসেন। তার গার্মেন্টেসে বায়ারদের বহনের জন্য আমার এক্স করোলা গাড়িটি মাসিক ২৭ হাজার টাকায় ভাড়া নেন। কিন্তু এক মাসের ভাড়াও পাইনি আমি।
গাড়ি নিয়ে পালানোর পর ধানমন্ডি থানায় অভিযোগ করি। পরে সিআইডির সহযোগিতায় গাড়িটি ফেরত পেয়েছি বলেও জানান অনু চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২১
এসজেএ/আরআইএস