ঢাকা: করোনার সংক্রমণ এড়াতে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ ছিল ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে। তবে অনলাইনে ভোগান্তিতে পড়ে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ট্রেনের টিকিট কিনতে কাউন্টারে ভিড় করছেন।
সোমবার (৯ আগস্ট) টিকিট বিক্রির প্রথম দিন সরেজমিনে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে ট্রেন শতভাগ যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। ট্রেনের সর্বমোট টিকিটের ৫০ শতাংশ কাউন্টারে ও ৫০ শতাংশ অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রির প্রথম দিনই ১১, ১২ ও ১৩ আগস্টের টিকিট অগ্রিম বিক্রি করা হয়েছে।
সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, দুই পাশের কাউন্টারে হালকা ভিড়। টিকিট কিনতে আসা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনলাইনে টিকিট কিনতে ব্যর্থ হয়ে কাউন্টারে এসেছেন তারা।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ১২ আগস্ট রাতে রাজশাহী যাবেন দাফতরিক কাজে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত অনলাইনে আমি টিকিট কাটি। সোমবার সকাল থেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়ায় কাউন্টারে এসেছি।
একই কথা বললেন জামালপুরের যাত্রী মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, অনলাইনে ঢুকতেই পারি নাই। সেজন্য কাউন্টারে এসে টিকিট কেটেছি।
১২ তারিখে নেত্রকোণায় যাবেন মোফাজ্জল হোসেন। অগ্রিম টিকিট কিনতে এসেছেন তিনি। কাউন্টারে টিকিট কিনতে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অনলাইনে টিকিট কেনাটা বেশ কষ্টসাধ্য। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেছি। না পেরে কাউন্টারে এসেছি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকিট কেনার ব্যবস্থা থাকায় স্বস্তিতেই টিকিট কিনতে পেরেছি।
অপেক্ষমান যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখা হলো তিন বছর বয়সী সামি ওসমানের সঙ্গে। বাবার সঙ্গে এসেছে টিকিট কাটতে। বাবার কেনা টিকিট হাতে নিয়ে হাসিমুখে বারবার গণমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে ব্যস্ত সে। এরই ফাঁকে কথা হয় তার বাবা নূর মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি রেলের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর। বিভিন্ন স্টেশন পরিদর্শনের কাজ করি। আমরা রেলের কর্মকর্তা হিসেবে বিশেষ পাস ব্যবহার করি। পাস ব্যবহার করে অনলাইনে টিকিট কাটা যায় না। সেজন্যই ছেলেকে নিয়ে কাউন্টারে এসে টিকিট কাটলাম।
তিনি আরও বলেন, শতভাগ যাত্রী নিয়ে ট্রেন চলাচল সিদ্ধান্তটি সঠিক। কারণ, অর্ধেক আসনের টিকিট বিক্রি হলেও মানুষ উঠে পাশাপাশি সিটে বসেন। এর চেয়ে বরং এটাই ভালো। আর ট্রেন চালু হওয়ার কারণে আমিও কাজে ফিরছি। স্টেশন বন্ধ থাকলে তো আমার কোনো কাজ থাকে না।
সোমবার শুধুমাত্র আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রীম টিকিট বিক্রি হয়েছে। মেইল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট যাত্রার দিনে বিশেষ কাউন্টার থেকে বিক্রি হবে।
সোমবারের টিকিট বিক্রির কার্যক্রমের বিষয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সকাল থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকিট বিক্রি করছি।
অনলাইনে টিকিট কেনার ভোগান্তির বিষয়ে তিনি বলেন, করোনার কারণে সবাই ঘরে বসে টিকিট কাটতে চান। এজন্য একসঙ্গে অনেক মানুষ অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। যার কারণে সিস্টেম হ্যাং করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার থেকে ৩৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন ও ২০ জোড়া মেইল-কমিউটার ট্রেন চলাচল করবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে যাত্রীদের জন্য বিশেষ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- কোনো প্রকার ভাড়া বাড়ানো যাবে না। সব অগ্রিম টিকিট যাত্রার পাঁচদিন আগে কিনতে হবে। অনলাইনে কেনা টিকিট ফেরত দেওয়া যাবে না। কমিউটার ট্রেনের টিকিট যথারীতি নির্দিষ্ট বক্স কাউন্টার থেকে দেওয়া হবে। আসনবিহীন টিকিট বিক্রি বন্ধ থাকবে। যাত্রীদের নিজ নিজ টিকিট নিশ্চিত করেই ট্রেনে ভ্রমণ করতে হবে। টিকিটবিহীন কোনো যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন না এবং মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রীকে ভ্রমণ করতে দেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২১
ডিএন/জেডএ/এমআরএ