ঢাকা, রবিবার, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

৫ একর জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ!

সুমন কুমার রায়, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
৫ একর জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ!

টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার ডুবাইল এলাকার কয়েকজনের পাঁচ একরেরও (৫০০ শতাংশ) বেশি জমি অবৈধভাবে দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে নাসির গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ‘নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে’র বিরুদ্ধে।  

শুধু তাই নয়, জমি দখলে নিতে না পেরে প্রতিষ্ঠানটি নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় সেই জমি লিখে নিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ নিয়ে ভুক্তভোগী কয়েকজন জমি রক্ষার্থে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন।  

স্থানীয়রা জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের পাশে ডুবাইল মৌজায় কিছু জমি স্থানীয় ইমান আলী নামের এক দালালের মাধ্যমে কিনে সেখানে মাটি ভরাট শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর পরিকল্পিতভাবে কেনা জমির বাইরে অন্যদের জমিতেও মাটি ফেলেন তারা। পরে জমির মালিক বাধা দিলে প্রথমে জমির দালাল তাদের সঙ্গে সমঝোতার জন্য জমি বিক্রির জন্য চাপ দিতে থাকেন। এতে রাজি না হলে দেওয়া হয় মামলা। এরপর মামলা থেকে বাঁচতে জমি বিক্রি বা লিখে দিতে বাধ্য হচ্ছেন স্থানীয়রা। এ রকমই ঘটনা ঘটেছে ডুবাইল এলাকার মঞ্জুরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গেও।

মঞ্জুরুলের ভাই নুরুল ইসলাম জানান, দীর্ঘদিন ধরে তার ভাইয়ের জমি দখলে নেওয়ার পাঁয়তারা করে নাসির গ্রুপ। এ কারণে জমির দালাল ইমান আলীর মাধ্যমে তার ভাইকে জমি বিক্রি করতে চাপ দেওয়া হয়। এতে রাজি না হওয়ায় ওই জমিতে জোর করে মাটি ভরাট শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে বাধা দিলে তার ভাই মঞ্জুরুল এবং ভাবিকে পুলিশ দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় দেলদুয়ার থানায়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে প্রতিষ্ঠানটি। ওই দিনই স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় পুলিশ এবং পরে চূড়ান্ত দলিল করে দিতে বাধ্য হন মঞ্জুরুল। বর্তমানে মঞ্জুরুল তার জমি হারিয়ে ঢাকায় বসবাস করছেন।
ফোনে মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়ার শর্তে তার কাছ থেকে স্ট্যাম্প করে নেওয়া হয়। এরপর তিনি জমিটি প্রতিষ্ঠানের নামে দলিল করে দিয়েছেন।

ডুবাইল গ্রামের মো. সহিদ মিয়া ওরফে তুলা জানান, নাসির গ্রুপ ইমান আলীর মাধ্যমে তার কাছে জমি কিনতে চায়। এতে তিনি তার জমি পাঁচ লাখ টাকা করে শতাংশ বিক্রি করতে রাজি হন। কিন্তু এরপর প্রতিষ্ঠানটি আর কোনো যোগাযোগ না করায় তিনিও জমি বিক্রি করতে আগ্রহ দেখাননি। প্রতিষ্ঠানটি তার জমির চারপাশ থেকে আরো জমি কিনে নেয়। এরপর ডুবাইল মৌজার পুরাতন দাগ নং ২৭১, নতুন দাগ নং ৬০১, ৬০২, ৬০৩ দাগের ২৪ শতাংশ, পুরাতন দাগ নং ২৮৫, নতুন দাগ নং ৬২৬ দাগের ৪৪ শতাংশ, পুরাতন দাগ নং ২৯৫, নতুন দাগ নং ৬৪৬ দাগের ১১ শতাংশ এবং পুরাতন দাগ নং ২৩৩, নতুন দাগ নং ৭৪৬ দাগের ৬০ শতাংশ জমি দখল নিয়ে মাটি ভরাট করে সেখানে কয়েকটি বহুতল ভবন নির্মাণ করে দখল করে ফেলা হয়েছে। তার নিজস্ব জমিতে এখন আর তাকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে তিনি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন অবৈধ দখল থেকে তার জমি উদ্ধারের বিষয়ে।

শুধু সহিদ নন, এ রকম আরো অনেকের জমিই অবৈধভাবে দখল নিয়ে রাতারাতি ভবন নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

একই এলাকার চন্ডি রাজবংশীর ৫৬ শতাংশ, হেলাল মিয়ার ৩০ শতাংশ, রফিকুল ইসলাম নয়ালের ৭০ শতাংশ, দুই ভাই মান্নান ও লতিফের ৫৬ শতাংশ, খালেকের ২০০ শতাংশ, হাসমতের ১০০ শতাংশ জমি এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি দখল নিয়ে ভবন নির্মাণ করেছে। এছাড়া একই এলাকার শুকুর মিয়ার ৩০ শতাংশ জমি দলিল করে নিলেও আজ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে নাসির গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার জয়নাল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জমিগুলো অধিগ্রহণের জন্য আবেদন পাঠানো হয়েছে। এটি এখন প্রক্রিয়াধীন।  

জমি অধিগ্রহণের চূড়ান্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত সেই জমিতে কোনো ভবন নির্মাণ করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সবার জমিই আদালা আলাদা করে রেখে দিয়েছি। যেসব জমিতে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া ওসি আরজুর একটা জমি ছিল, সেটিও আলাদা করে রাখা আছে।

নাসির গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘নাসির ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে’র জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল হামিদ বাংলানিউজকে জানান, মঞ্জুরুল ইসলামের জমি জোর করে লিখে বা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়নি। মঞ্জুরুল তাদের কাজে বাধা দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এরপর বিষয়টি সমঝোতা হয়ে গেছে। লকডাউন থাকার কারণে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০১ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০২১
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।