ঢাকা: অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ধর্মীয় উগ্রবাদী মতাদর্শ প্রচার ও আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে দেশে নাশকতার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন গ্রেফতার আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা।
এজন্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিকিউরড গ্রুপ খুলে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ চালানো এবং নতুন কর্মী সংগ্রের কাজ করছিলেন।
গ্রেফতার সদস্যরা 'গাজওয়াতুল হিন্দ' প্রতিষ্ঠার জন্য অনলাইন প্লাটফর্মে উগ্রবাদ প্রচারণাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছিলেন বলে জানিয়েছেন এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস বিভাগের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসলাম খান।
বুধবার (১১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর বারিধারা এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
এর আগে বুধবার ভাের ৪টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর রায়েরবাগ ও কদমতলী পৌরসভা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট।
গ্রেফতার জঙ্গি সদস্যরা হলেন- মাে. রায়হান হােসেন ওরফে সাব্বির হোসেন রাইহান ওরফে আল রাব্বী (১৮), তানভীর হােসেন (২১), মাে. আমিনুল ইসলাম (২১) ও সাগর ইসলাম ওরফে ইউসুফ বিন আব্দুর রাকিব (২১)। এ সময় অভিযানে তাদের কাছ থেকে ৪টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট, ২টি ছােড়া এবং ২টি বিভিন্ন উগ্রবাদী বই, ৫টি বুকলেট জন্দ করা হয়।
পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, গ্রেফতার আসামিরা আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তারা সবাই একই এলাকায় বসবাস করতেন। সেই সুবাদে তারা নিয়মিত দেখা স্বাক্ষাৎ ও অনলাইনে যোগাযোগ চালাতেন৷ গত ৬ মাস ধরে তাদের ওপর নজরদারি চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মো. রায়হান হােসেন ওরফে সাব্বির হােসেন রাইহান মাতাউল হাজি আব্দুর লতিফ ভূইয়ান কলেজের ছাত্র। তানভীর হােসেন স্থানীয় হাজী মিছির আলী ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষে শিক্ষার্থী।
এদিকে মাে. আমিনুল ইসলাম ২০১৬ সালে রায়েরবাগ এলাকার বর্ণমালা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ইন্টারনেট ব্যবসা করে আসছিলেন। অপর সদস্য সাগর ইসলাম ঢাকার গভ. ল্যাবরেটরি কলেজের অনার্স ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, আটক মাে. রায়হান হােসেন ওরফে সাব্বির হােসেন রাইহান ওরফে আল রাব্বীসহ (১৮) তার সহযােগীরা 'গাজওয়াতুল হিন্দ' প্রতিষ্ঠার জন্য অনলাইনে উগ্রবাদ প্রচারণাসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে খিলাফত প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরেই অনলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তারা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্র ও সরকার বিরােধী এবং উস্কানিমূলক ও উগ্রবাদ বিভিন্ন পােস্ট দিয়ে আসছিলেন। তাছাড়া নিজেদের মতবাদ প্রচারের মাধ্যমে অনলাইনে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষে সদস্য সংগ্রহের কাজ করে আসছিলেন।
তিনি বলেন, তারা জঙ্গি নেতা জসীমউদ্দিন রাহমানীর মতাদর্শকে অনুসর করতেন। এ কারণেই বিভিন্ন উগ্রবাদী বিভিন্ন বই ও বক্তৃতা অনলাইনে পােস্ট করতেন। এতে যারা আগ্রহী হতো তাদের সঙ্গে নিয়মিত যােগাযােগ করতেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসপি মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় জঙ্গি সংগঠনগুলো ভেঙে পড়েছে৷ বড় কোনো হামলা চালানোর মত তাদের সক্ষমতা নেই। তবে, তারা অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদের মতাদর্শ প্রচার ও নতুন কর্মী সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে আসছে।
এ বিষয়ে পুলিশে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট জঙ্গি সংগঠনগুলোর সদস্যদের ওপর নজরদারি অব্যাহত রেখেছে।
গ্রেফতার হওয়া আসামিরা নিষিদ্ধ ঘােষিত জঙ্গি সংগঠন 'আনসারুল্লাহ বাংলা টিম'র সদস্যপদ গ্রহণ, সমর্থন, সদস্য সংগ্রহ এবং অনলাইনে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড প্ররােচিত করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর কদমতলী থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০২১
এসজেএ/এএটি