ঢাকা, সোমবার, ২৭ মাঘ ১৪৩১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

পদ্মার ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে জাজিরার মানচিত্র    

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২১
পদ্মার ভাঙনে পাল্টে যাচ্ছে জাজিরার মানচিত্র    

শরীয়তপুর: পদ্মা নদীর ভাঙনে পাল্টে যেতে বসেছে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মানচিত্র। গত জুন মাস থেকে দফায় দফায় ভাঙনে জাজিরা উপজেলার পূর্বনাওডোবা, জাজিরা, কুন্ডেরচর, বড়কান্দি, পালেরচর ও বিলাসপুর ইউনিয়নের প্রায় তিন শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

 

বাপ-দাদার ভিটে মাটি ফেলে কোথাও দূরবর্তী জায়গায় ঘর বানিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন-যাপন করছেন বাড়ি-ঘর হারা মানুষ। তারা এখন কর্মহীনও হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে জুলাই মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গে পদ্মানদীর পানি বাড়ায় বড়কান্দি ইউনিয়নের রঞ্জন ছৈয়াল কান্দি, খলিফা কান্দি ও দুর্গারহাট গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমিসহ কিছু মসজিদ, মাদরাসা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন বিকে মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও দূর্গারহাট বাজার হুমকির মুখে রয়েছে। পদ্মার ঢেউয়ের শো শো শব্দে ভাঙন আতঙ্কে রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায় এলাকাবাসীর।  

এদিকে পালেরচর ইউনিয়নের কাথুরিয়া মোহন ফকির কান্দি, ফরাজি কান্দি, দেওয়ান কান্দি, হুকুম আলী সরদার কান্দি, রাঢ়ি কান্দি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে সেখানেও প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে শতাধিক বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি। বিগত কয়েকদিনের লকডাউনের কারণে তেমন কোনো কাজও ছিল না এসব দিনমজুর ও কৃষি শ্রমিকদের। এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার টাকা পয়সা যোগাড় করতে পারছেন না অনেকে। অনেকে সুদে টাকা এনে অন্যত্র ঘর বানানোর পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। তীব্র ভাঙনের মুখে নদীর পাড়ের লোকজন অসহায় হয়ে পড়েছেন।  
 
জানা যায়, ২০১৮ সালে পদ্মার ভাঙনরোধে ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় ১২ দশমিক তিন কিলোমিটার সুরক্ষিত করায় তিন বছর ভাঙন আতঙ্ক থেকে মুক্তি পেয়েছেন নড়িয়াবাসী। কিন্তু এখনো জাজিরা উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী ১৬ কিলোমিটার বাঁধের আওতায় না আসায় প্রতিবছরই ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন অংশ ভাঙছে। এরই মধ্যে শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।  

এ ব্যাপারে বড়কান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম সিরাজুল ইসলাম বলেন, বর্ষার শুরুতে বড়কান্দি ইউনিয়নে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। মানুষ বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়ারও সময় পাচ্ছেন না। তাই তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছি।  

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি পদ্মানদী গ্রাস করে নিয়েছে। মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। আমি পরিষদের পক্ষ থেকে দুইশ’ পরিবারের মধ্যে ২০ কেজি করে জিআর চাল বিতরণ করেছি। এছাড়া আমার সাধ্যমতো তাদের সহায়তা করে যাচ্ছি।  

এ ব্যাপারে জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার এস এম রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক বছরের ভাঙনে ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডের ৮০ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পাতালিয়া কান্দি গ্রামের ১৩২ পরিবারের বাড়ি-ঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এভাবেই পাল্টে যেতে বসেছে জাজিরার মানচিত্র। ভাঙনরোধে দ্রুত সরকারি পদক্ষেপ কামনা করছি।  

পালেরচর ইউনিয়নের বাসিন্দা জুলহাস মেম্বার বলেন, পালেরচর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বাড়ি-ঘর ও জমি পদ্মানদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে আরও শতাধিক পরিবার। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এসব এলাকা।  

পানি উন্নয়ন বোর্ড শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবীব বলেন, জাজিরার যেসব স্থানে ভাঙন দেখা গেছে, সেসব জায়গায় ভাঙন রোধে বালু ভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আর জাজিরাকে স্থায়ীভাবে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে পদ্মার ডান তীর জাজিরার ১৬ কিলোমিটার স্থায়ী বাঁধের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আর ভাঙনের সমস্যা থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২১
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।