ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৩০ মাঘ ১৪৩১, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ শাবান ১৪৪৬

জাতীয়

নাম পাল্টে ২২ বছর পলাতক ফাঁসির আসামি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
নাম পাল্টে ২২ বছর পলাতক ফাঁসির আসামি

ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নাম-পরিচয় পাল্টে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে পলাতক ছিলেন। কাজী আরেফ ছাড়াও স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ আরও ছয়-সাতজনের হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এ সিরিয়াল কিলারের।

১৯৯৯ সালে কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডের পরে এ রওশন রাজশাহীতে গিয়ে নিজের নাম-পরিচয় পরিবর্তন করে উদয় মণ্ডল নামে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। এর বাইরে আলী নামে পরিচয় দেওয়া তিনি রাজশাহীতে একটি গরুর খামার তৈরি করেন।

ভিন্ন ভিন্ন নামে দীর্ঘ ২২ বছরের বেশি সময় পলতক থাকার পর অবশেষে বুধবার (১৯ আগস্ট) রাতে রাজশাহীর শাহমখদুম থানার ভারালীপাড়া এলাকা থেকে মো. রওশন ওরফে আলী ওরফে উদয় মণ্ডলকে গ্রেফতার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলায় একটি সভা চলাকালীন প্রকাশ্য দিবালোকে দুর্বৃত্তদের অতর্কিত গুলি বর্ষণে কাজী আরেফসহ পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় দৌলতপুর থানায় দায়েরকৃত মামলায় ২৯ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে পুলিশ। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা দায়রা জজ আদালত ১০ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ১২ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করলে ২০০৮ সালের ৫ আগস্ট উচ্চ আদালত নয়জন আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন ও বাকি ১৩ জনকে খালাস দেন। এরমধ্যে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি তিনজন আসামির ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়। আর একজন আসামি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত অপর পাঁচ আসামি দীর্ঘদিন ধরে পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতারে র‌্যাব উদ্যোগী হয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে। এর ধারাবাহিকতায় রওশনকে গ্রেফতার করা হয়। রওশন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, রওশন রাজবাড়ীর একটি কলেজ থেকে বিএ পাস করে ১৯৯২ সাল থেকে সীমান্তবর্তী চোরাচালান, হাট ইজারাসহ বিভিন্ন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজে সম্পৃক্ত হয়। এ সমস্ত কাজে তিনি এলাকায় সন্ত্রাসী চক্র গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে চরমপন্থী দলের সখ্যতাও তৈরি হয়। ১৯৯৮ সাল পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েকটি হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রওশন পরিচয় পাল্টে রাজশাহীতে অস্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করেন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, তিনি রাজশাহীতে পরিচয় গোপন করতে আলী নামে পরিচয় দিতেন। এছাড়া তার আদি নিবাস গাজীপুর বলে সবাইকে জানাতেন। প্রাথমিকভাবে সেখানে একটি গরুর খামার স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে জমি কেনা-বেচার ব্যবসায় যুক্ত হন। এভাবে ধীরে ধীরে তিনি রাজশাহীতে স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। রাজশাহীতে উদয় মণ্ডল একটি জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।

কাজী আরেফ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে রওশন জানান, ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ছাড়াও সমন্বয় এবং পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। এছাড়া চেয়ারম্যান বাকী ও স্থানীয় আমজাদ হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনার সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ছিল। এছাড়া ২০০০ সালের ২১ জুন স্কুল শিক্ষক আমজাদ হত্যাসহ আরও বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
পিএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।