ঢাকা: নতুন পাসপোর্টের আবেদন এবং পুরনো পাসপোর্টের রি-ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে পাসপোর্ট অফিসে উপচে পড়া ভীড় সেবা প্রত্যাশীদের। সাধারণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবদেন ফরম পূরণের পর জমা দেওয়ার তারিখ পেতেই সময় লাগছে অনেক।
বুধবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে সেবা প্রত্যাশীদের দীর্ঘ লাইন দেখা যায়। দীর্ঘদিন লকডাউনের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় প্রতিদিনই শত শত মানুষ আসছেন পাসপোর্ট সংক্রান্ত কাজ নিয়ে।
পাসপোর্ট অফিসের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে গিয়ে সেবার জন্য আসা নাগরিকদের ব্যাপক ভীড় দেখা যায়। আবার আগে থেকে আসা অপেক্ষমান সেবা প্রত্যাশীদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও কোথাও উপচে পড়া ভীড়ের কারণে আশেপাশ দিয়ে চলাচলই কঠিন হয়ে পড়ে।
কার্যালয়ের প্রধান গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই ছাউনির নিচে ফরম জমা দিতে আসা আবেদনকারীদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। সেখান থেকে তথ্য যাচাইয়ের জন্য পাশের একজন সহকারী পরিচালকের কক্ষের ভেতরে ও বাইরে লম্বা ‘সিরিয়াল’ দেখা যায়। একই সাথে নতুন পাসপোর্টের আবেদন ও পুরনো পাসপোর্টের রি-ইস্যু সংক্রান্ত কাজের সাথে জড়িত তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার প্রতিটি ফ্লোরেই নাগরিকদের উপচে পড়া ভীড় দেখা যায়। চতুর্থ তলায় ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার সিরিয়াল নির্ধারিত অংশের বাইরে এসে গড়ায় সিঁড়িতেও। স্বাস্থ্যবিধি তো দূরের কথা, সিরিয়ালে দাঁড়ানো আবেদনকারীদের কারণে সিঁড়িতে চলাচলই মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।
অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) এবং ই-পাসপোর্ট মিলিয়ে শুধু এই কার্যালয়েই দেড় হাজারের বেশি আবেদন প্রতিদিন জমা পড়ে। নতুন পাসপোর্টের পাশাপাশি রি-ইস্যুর জন্য আশা পাসপোর্ট মিলিয়ে এই সংখ্যা দৈনিক প্রায় দুই হাজার।
এদিন সকালে পাসপোর্ট অফিসে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি আকাশের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লকডাউন খুলে দিয়েছে এবং বিশ্বের অনেক দেশেই এখন ভ্রমণে যাওয়া যাচ্ছে। তাই পাসপোর্ট করার জন্য আবেদন করেছি। অনলাইনে আবেদন করে দেখি জমা নেওয়ার তারিখ পাওয়া যায় প্রায় মাস খানেক পর। জমা দিতেই যদি এতদিন লেগে যায় তাহলে পাসপোর্ট কবে পাবো। তাই এখানে কর্তৃপক্ষের কারও সাথে যোগাযোগ করা যায় কি না সেজন্য এলাম।
কেউ কেউ আবার এসেছেন পাসপোর্ট রি-ইস্যু করাতে। তবে কারও কারও অভিযোগ, দালাল চক্রের মাধ্যমে গেলে দ্রুতই পাওয়া যায় পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, লকডাউনের আগে একবার এসেছিলাম নতুন পাসপোর্ট করতে। কিন্তু আবেদন পত্রে কিছু না কিছু ভুল ধরায় প্রতিবারই ফিরে যেতে হয়েছে। লকডাউনের পর আবার এসেছি। কিন্তু এখানে যে সিরিয়াল আর মানুষের দীর্ঘ অপেক্ষা দেখছি, আমার মনে হয় সিঁড়ির সেই পরিবেশে প্রচণ্ড গরমে আমি অসুস্থ হয়ে যাবো। পরে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে আছি এমন সময়ে এক লোক এসে বলল, পাঁচ হাজার টাকা বেশি দিলে সহজেই পাসপোর্ট পেয়ে যাবো। ছবি তোলা আর ফিঙ্গার দেওয়ার দিন নাকি সিরিয়ালও দিতে হবে না। সেজন্য সেদিন আলাদা এক হাজার টাকা লাগবে। এখন এটাই ভাবতেছি যে কী করব।
তবে দালালদের কিছু দৌরাত্ম্য আছে মেনে নিলেও সেটি আগের মতো নেই বলে দাবি করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী। দালালরা ফরম পূরণ করে দেওয়ার মতো সাধারণ কিছু কাজে কাউকে সাহায্য করে থাকতে পারেন বলে জানান তিনি।
নাগরিকদের সেবা দিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করা হচ্ছে উল্লেখ করে মেজর জেনারেল আইয়ুব চৌধুরী বলেন, কিছু দালাল আছে, তবে তারা চাইলেই কারও কাজ দ্রুত করিয়ে দিতে পারছে বিষয়টা এমন নয়। তারা আর আগের মতো কাজ করতে পারছে না। অনেকেই পাসপোর্টের ফরম ঠিকভাবে পূরণ করতে পারেন না। তাদের কাউকে কাউকে হয়তো তারা ফরম পূরণ করতে সাহায্য করে। এখন পাসপোর্ট ডেলিভারির ক্ষেত্রেও কিছু ‘বার’ (প্রতিবন্ধকতা) আছে, যেমন এক্সপ্রেস পাসপোর্ট কমপক্ষে সাত দিন, সাধারণ হলে কমপক্ষে ২১ দিন সময় লাগে। কাজেই কোনো দালাল চাইলেই দ্রুত পাসপোর্ট দিতে পারবে বিষয়টা এমন না।
সেবা প্রত্যাশীদের চাপ সামলাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক প্লাটুন লোকবল পাওয়া গেছে বলেও জানান অধিদপ্তরটির মহাপরিচালক। তিনি বলেন, করোনা এর এই সময়ে আজ পর্যন্ত কোনো কর্মদিবসে পাসপোর্ট অফিস বন্ধ ছিল না। কম লোকবল দিয়ে হলেও কাজ চালু রেখেছি। যেমন অর্ধেক লোকবল রিজার্ভ রেখেছি যেন কেউ অসুস্থ হলে সেখান থেকে কাউকে আনতে পারি। আমাদের লোকবল দরকার। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ যে তারা এক প্লাটুন সৈন্য দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যারাই আসছেন কাউকেই সেবা না দিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে না। আমি যদি গতকালের তথ্য দেই, তাহলে একদিনেই আমাদের অধিদপ্তর থেকে প্রায় আট হাজার ই-পাসপোর্ট তৈরি হয়ে ডেলিভারির জন্য গিয়েছে। ই-পাসপোর্টের জন্য আমাদের আটটি মেশিনে কাজ চলছে। আর দেশে ও বিদেশে থাকা নাগরিকদের জন্য প্রায় ছয় হাজার পাসপোর্ট প্রিন্ট হয়ে ডেলিভারির জন্য গিয়েছে। তিনটি মেশিন এমআরপি পাসপোর্টের জন্য ব্যবহার করছি আমরা।
পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবার জন্য প্রধান কার্যালয়ের চেয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোতেও যাওয়ার পরামর্শ দেন মহাপরিচালক। তিনি বলেন, বেশিরভাগ মানুষজনই এখানে চলে আসেন কিন্তু তাদের নিজস্ব এলাকা অথবা তার আশেপাশেই আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। আমরা কিন্তু তাদেরকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না বরং সেবা দিচ্ছি। তবে এরজন্য আমরা আপনাদের (মিডিয়ার) সাহায্য চাই সবার মাঝে সচেতনতার জন্য যে, কারও ঠিকানার কাছে যে আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে সেখানে আগে যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২১
এসএইচএস/এজে