ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার পথ। এ সড়কে ২০১৭ সালের আগস্টের প্রথম দিনে শুরু হয় নগরবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ।
ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে চলবে মেট্রোরেল কোচ। অন্যদিকে মেট্রোরেলের সড়ক জুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য পাতাবাহার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ লাগানো হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মেট্রোরেলের পথ জুড়ে পাতাবাহার, কাঞ্চন, করবী, গন্ধরাজ, কুর্চি, রাধাচূড়া, হৈমন্তী, টগর, সোনালু, কৃষ্ণচূঁড়া, কদম, বকুল, পলাশসহ বিভিন্ন ফুলের গাছ লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
নগরীর আগারগাঁও থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত সড়ক আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। সড়কের মাঝখানে মেট্রোরেলের পিলারের পাশ ঘেঁষে কংক্রিকেটের ছোট ছোট ওয়াল দেওয়া হয়েছে। এরপরে মাটি ভরাট করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জাতের ফুল গাছ লাগানোর জন্য জৈব সারও দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের প্রতিটা প্যাকেজের আওতায় ফুলের গাছ লাগানোসহ বনায়নের জন্য পৃথক বরাদ্দও রয়েছে।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৬) উপ-প্রকল্প পরিচালক (ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন) শান্তি মনি চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্পের ভায়াডাক্টের ওপরের কাজ সমাপ্ত হওয়ার পাশাপাশি সড়কও উন্মুক্ত করা হচ্ছে। সড়ক পূর্বের রূপ পাচ্ছে। এর আগে সড়কে যেসব গাছ ছিল তার থেকে বেশি গাছ লাগানো হবে। পাশাপাশি পাতাবাহার থেকে শুরু করে বিভিন্ন জাতের ফুলের গাছ লাগানো হবে মেট্রোরেল সড়ক জুড়ে। প্রতিটা প্যাকেজে আলাদা করেই ফুলের গাছ লাগানোর কথা বলা আছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার অংশে যেহেতু সড়কে মেট্রোরেলের কোনো কাজ বাকি নেই এজন্য সবকিছু সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। আগারগাঁও থেকে উত্তরা পর্যন্ত শতভাগ সড়ক যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। শুধু কয়েকটি স্টেশনের কাজ এখনও বাকি আছে আগারগাঁও থেকে উত্তরা রুটে। ফলে এসব স্থানে সড়ক থেকে এখনও সরেনি নির্মাণ সামগ্রী। বাকি অংশের নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চলছে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ।
প্যাকেজ-৩ ও ৪ এর আওতায় উত্তরার উত্তর অংশ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও তিনটি স্টেশন নির্মাণ কাজ অন্তর্ভুক্ত। ইতোমধেই পরিষেবা স্থানান্তর, চেকবোরিং, টেস্ট পাইল, মূল পাইল, পাইল ক্যাপ, আই গার্ডার, প্রিকাস্ট গেমেন্ট কাস্টিং, পিয়ার হেড, ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সব প্যারাপেট ওয়াল ভায়াডাক্টের ওপর স্থাপন, ৫টি লং স্প্যানসহ সব স্টেশনের উপ-অবকাঠামো ও ছাদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। উত্তরার উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ এবং পল্লবী স্টেশনের নির্মাণ কাজও সম্পন্ন হয়েছে। সব স্টেশনের মেকানিক্যাল অ্যান্ড প্লাম্বিং কাজসহ এন্ট্রি-এক্সিট স্ট্রাকচার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। সার্বিক অগ্রগতি ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ।
সরেমজিন ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের অনেক স্থানে মেট্রোরেলের কারণে খোঁড়াখুঁড়ি নেই। এরপর পাইলিং, পিলার তৈরিসহ বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন। মেট্রোরেলের প্রথম অংশ উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে আগারগাঁও এলাকার পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। ফলে বলা চলে আগারগাঁও থেকে দিয়াবাড়ী পর্যন্ত সড়কে মেট্রোরেলের আর কোনো কাজ নেই। ভায়াডাক্টের ওপরের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ব্যস্ততম সড়কে এ কর্মযজ্ঞ রাজধানীবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু সেই দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। মেট্রোরেলের পিলার আশপাশে কংক্রিট ও স্টিলের বেড়া অপসারণ করে সড়ক মসৃণ করা হচ্ছে। মেট্রোরেলের পিলারগুলোকে রক্ষার্থে শুধু ছোট পরিসরে সড়কের মাঝ বরাবর সিমেন্টের ব্লক দেওয়া হচ্ছে। সড়কের শতভাগ অংশ খুলে দেওয়া হচ্ছে। কারণ মেট্রোরেল পিলার শুধু সড়কের মাঝ বরাবর অবস্থান করছে।
মেট্রোরেল চলাচলের জন্য নগরীতে নির্মিত হয়েছে উড়াল রেলপথ। এ উড়াল রেলপথে দেশের প্রথম মেট্রোরেল পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু করবে রোববার (২৯ আগস্ট)। এদিন সকাল ১০টায় উত্তরা থেকে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত উড়াল পথে ট্রেন পরিচালনা করা হবে। পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে পল্লবী স্টেশন পর্যন্ত পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল করে। এ সময় কোনো ধরনের সমস্যা হয়নি।
উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এমআরটি-৬ বা বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। প্রতিদিন এ এলাকায় বসবাসকারী লাখো নগরবাসী মেট্রোরেল ব্যবহার করে গন্তব্যে যাতায়াত করতে পারবেন।
প্রকল্পে ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ছয়টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৮, ২০২১
এমআইএস/আরআইএস